বিশ্বে ১০০ কোটি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি বা আইআরসি। সংক্রমণ শ্লথ করতে আর্থিক ও মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এসেছেন এবং চীনকে আক্রমণ করেছেন। তবে চীন বলছে, নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে আক্রান্ত ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। এদিকে রাশিয়ায় সংক্রমণ চীন ও ইরানকে অতিক্রম করেছে। ফ্রান্স, স্পেন ও গ্রিস লকডাউন শিথিলের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
কড়া সতর্কবার্তা
আইআরসি সতর্ক করেছে, দরিদ্র ও সংঘাতকবলিত দেশগুলোকে সাহায্য করা না হলে এত সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। আফগানিস্তান, ইয়েমেন ও সিরিয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই সংস্থাটি বলছে, এসব দেশে বড়ো ধরনের মহামারি এড়াতে তাদের জরুরি ভিত্তিতে অর্থ সাহায্য দেওয়া প্রয়োজন। আইআরসি বলছে, প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়া না হলে যুদ্ধকবলিত ও অস্থিতিশীল দেশগুলোতে ১৭ থেকে ৩২ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। সারা বিশ্বে গতকাল পর্যন্ত ৩১ লাখ ৫ হাজারের বেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মারা গেছে ২ লাখ ১৪ হাজারের বেশি মানুষ।
ট্রাম্প ও চীনের ফের বাকযুদ্ধ
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এসেছেন। হোয়াইট হাউজে স্থানীয় সময় সোমবার ব্রিফিংয়ে এসেই করোনা ভাইরাস নিয়ে চীনকে আক্রমণ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, উত্স থেকেই করোনা ভাইরাস শেষ করা যেত। সারা বিশ্বে ছড়াতে পারত না। কিন্তু চীনের অবহেলায় সেটা সম্ভব হয়নি। তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, মার্কিন গোয়েন্দারা এই ভাইরাস নিয়ে তদন্ত করছে। তবে চীন বলছে, যুক্তরাষ্ট্র করোনা ভাইরাসের হানা সামাল দিতে না পারায় অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। দেশটি অন্যদিকে বিশ্বের মনোযোগ আকৃষ্ট করার পরিকল্পনা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ১০ লাখ অতিক্রম
ওয়ার্ল্ডোমিটার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ ২২ হাজার এবং প্রাণহানি প্রায় ৫৮ হাজার। ওয়াশিংটন পোস্ট বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, গোয়েন্দারা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভাইরাস নিয়ে বারবার সতর্ক করলেও তিনি গুরুত্ব দেননি। তাকে এক ডজনেরও বেশি গোপন ব্রিফিংয়ে ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করা হয়।
ব্রিটেনে নতুন উপসর্গ
করোনা ভাইরাসের এই সংকটে নতুন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ব্রিটেনের শিশুরা। ব্রিটেনে কিছু শিশুর দেহে খুবই বিরল উপসর্গ দেখা দিয়েছে যা করোনার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা শিশুদের দেহে এ ধরনের উপসর্গকে বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছেন। ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এনএইচএস থেকে চিকিত্সকদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
রাশিয়ায় সংক্রমণ চীন ও ইরানকে ছাড়িয়েছে
সংক্রমণে চীন ও ইরানকে ছাড়িয়েছে রাশিয়া। গতকাল রুশ সরকার জানিয়েছে, এক দিনে ৬ হাজার ৪১১ জন আক্রান্ত। ফলে দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৯৩ হাজার ৫৫৮ জন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রাজধানী মস্কোতে। রাশিয়ায় মারা গেছে ৮৬৭ জন। ইরানে আক্রান্ত ৯২ হাজার ৫৮৪ এবং চীনে ৮৩ হাজার ৯৩৮ জন। সরকারবিরোধী ওয়েবসাইট ওপেন মিডিয়া বলছে, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী না থাকায় মস্কোর একটি হাসপাতাল থেকে বহু নার্স চলে গেছেন। কর্তৃপক্ষ এই খবর অস্বীকার করেছে।
স্পেনে মৃত্যু সংখ্যা কমছে
স্পেনে ২৪ ঘণ্টায় ৩০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার এই সংখ্যা ছিল ৩৩১। দেশটিতে এ নিয়ে মোট মৃত্যু দাঁড়াল ২৩ হাজার ৮২২ জন। নতুন করে সংক্রমিত ১ হাজার ৩০৮ জন। এর ফলে দেশটিতে মোট ২ লাখ ৩২ হাজার ৮২২ জন আক্রান্ত।
হংকংয়ে সরকারি কর্মীরা কাজে ফিরছে
৪ মে থেকে কাজে ফিরছেন হংকংয়ের সরকারি কর্মীরা। শহরটিতে টানা দ্বিতীয় দিন নতুন রোগী পাওয়া যায়নি এবং তারা লকডাউন থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজছে। শহরটিতে ১ হাজার লোক আক্রান্ত এবং চার জন মারা গেছে। ইন্দোনেশিয়ায় ধারণা করা হচ্ছে সরকারি হিসেবের চেয়ে প্রায় ২ হাজার ২০০ মানুষ বেশি মারা গেছে।
লকডাউন শিথিলের ঘোষণা তিন দেশের
ফ্রান্স, স্পেন ও গ্রিস লকডাউন শিথিলের ঘোষণা দিয়েছে। এজন্য দেশগুলো তাদের পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছে। ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্ড ফিলিপ গতকাল জানিয়েছেন, ১১ মে থেকে লকডাউন শিথিল হবে। দেশটিতে সবাইকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীও ৪ থেকে পর্যায়ক্রমে লকডাউন শিথিলের ঘোষণা দিয়েছেন। আর স্পেনের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, জুনের শেষ দিকে দেশে আর কোনো লকডাউন থাকবে না। তিনি চার স্তরের পরিকল্পনার কথা জানান।
পাকিস্তানে গতকাল ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে আক্রান্ত ১৪ হাজার ৭৮৮ ও মৃত্যু হয়েছে ৩২২ জনের। ভারতে ২৪ ঘণ্টায় আরো ১ হাজার ৫৯৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তার ফলে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ২৯ হাজার ৯৭৪ জন। সেই সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুও। ২৪ ঘণ্টায় ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা ৯৩৭।