নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে দিশেহারা ভোক্তা

0
544
বাড়ল দোকান খোলার সময়, বাধা নেই ইফতার বিক্রিতে

খবর৭১ঃ রমজান ঘিরে রাজধানীর খুচরা বাজারে চাল, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেল, আদা-রসুনসহ বিভিন্ন সবজি উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি রোজায় অতি ব্যবহৃত পণ্য ছোলা ও খেজুরও চড়া মূল্যে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। এ ছাড়া বাজারে সব ধরনের মাংসের দামও বাড়তি। এসব পণ্য কিনতে একরকম দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভোক্তারা। তারা বলছেন, সরকার ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে নানা আশ্বাস দেয়া হলেও রমজানে নিত্যপণ্যের লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। প্রতিবছরের মতো এবারও রমজানে অতি মুনাফার লোভে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী একাধিক নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে। অসাধুরা ভোক্তার পকেট কাটলেও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

সোমবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ছোলা ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মাসের ব্যবধানে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি রসুন ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মাসের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি দরে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি মসুর ডাল (বড় দানা) ২৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মাসের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ৩০ শতাংশ বেশি দরে। শুকনা মরিচ কেজিতে সপ্তাহের ব্যবধানে ২২ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মাসের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ৪৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি দরে। মাসের ব্যবধানে কেজিতে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি দরে।

মাসের ব্যবধানে খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেশি দরে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ মাসের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি দরে। এ ছাড়া মাসের ব্যবধানে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি দরে, আর লিটারে খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ২ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি দরে। প্রতি কেজি সরু চাল মাসের ব্যবধানে ৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ, কেজিতে বয়লার মুরগির ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ ও দেশি মুরগি ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, কোন পণ্যে কারা দাম বাড়ায় সরকারের উচিত হবে তা চিহ্নিত করা। একই সঙ্গে কোন স্তর থেকে কতটা বাড়ানো হয় তার যৌক্তিক পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া। তিনি আরও বলেন, ভোক্তাসাধারণকে মূল্যের নিরাপত্তা দিতে নিত্যপণ্যের মূল্য কারসাজির সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া ভোক্তাদেরও অতি উৎসাহী হয়ে একদিনে ১০ দিনের পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন: চাল, ডাল, তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন ও আদাসহ সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এ মজুদের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় বেশি। কোনো পণ্যের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা বা কারণ নেই। কৃত্রিম উপায়ে কোনো পণ্যের সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্বশীল হয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। সব পণ্যের সরবরাহ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গঠিত টাস্কফোর্স এবং বিভিন্ন কমিটিকে আরও তৎপর হয়ে কাজ করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে।

এদিকে সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, দেশের আড়াই কোটি পরিবার টিসিবির সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য সেবা পাচ্ছেন। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। কারসাজি করলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিন রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি মসুর ডাল (বড় দানা) বিক্রি হয়েছে ৯০-১০৫ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে (গত সোমবার) বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮০ টাকা। মানভেদে ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮০ টাকা। প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয়েছে ১২০-১৪০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১১০-১৩০ টাকা। শুকনা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৫০-৩০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২০০-২৫০ টাকা। প্রতি কেজি আদা বিক্রি হয়েছে ২৮০-৩১০ টাকা। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭৫ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭০ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১১০-১৫০ টাকা। দেশি মুরগি কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৫০-৫০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫০-৪০০ টাকা।

অন্যদিকে গত সপ্তাহে ২০-২৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গাজর সোমবার বিক্রি হয়ে ৩০-৪০ টাকা। গত সপ্তাহে ২০ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতি কেজি শসা সোমবার বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ টাকা। এ ছাড়া এদিন প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৬০-৮০ টাকা।

যা এক সপ্তাহ আগেও ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া গত সপ্তাহে ১৫-২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো এদিন বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪০ টাকা।

রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. রাশেদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, কোনো রমজানেই একটু স্বস্তিতে বাজার করতে পারি নাই। সব রমজানেই বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। তবে এই করোনা পরিস্থিতিতে আয় নেই। আর রমজানে বাজার করতে ব্যয় বেশি করতে নাজেহাল হতে হচ্ছে।

রাজধানীর কেরানীগঞ্জের জিনজিরা বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বাজারে সব কটি খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তি। করোনা পরিস্থিতির প্রথম থেকেই বিক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। আর রমজান ঘিরে আরেক দফা দাম বাড়ানোর ফলে নিত্যপণ্য কিনতে দিশেহারা হতে হচ্ছে। তাই মনিটরিং জোরদার করে পণ্যের দাম সহনীয় করতে হবে।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের সদস্য ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মণ্ডল যুগান্তরকে বলেন, রমজান ও করোনা পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলসহ রাজধানীতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ৬টি টিম সার্বিকভাবে বাজার তদারকি করছে। পণ্যের দাম কেন বাড়ানো হয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে। কোনো অনিয়ম বা অসাধুতা সামনে এলে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এতে ইতোমধ্যে কিছু পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে, কয়েক দিনের মধ্যে বেড়ে যাওয়া সব কটি পণ্যের দাম কমে আসবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here