খবর৭১ঃ
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের চতুর্থ ধাপে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেশ কয়েক দিন ধরেই ৩০০ থেকে ৫০০-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। তবে আগামী মে মাসে এটি ব্যাপক হারে বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। আর তখনই নেমে আসতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। কারণ এ ভয়ংকর গণসংক্রমণ ঠেকানোর মতো চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক সরঞ্জামাদি এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থাপনা আমাদের নেই। আমাদের সবচেয়ে বড়ো ভরসা শতভাগ লকডাউন কার্যকর করা, আর বেশি বেশি পরীক্ষা করে সংক্রমিতদের আলাদা করা। অর্থাৎ তাদের আইসোলেশনে রাখা।
এছাড়া হোম কোয়ারেন্টাইনের পরিবর্তে সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার চালু করার তাগিদ দিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আরো বলেন, গত এক সপ্তাহে যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে আগামী মাসের মাঝামাঝির দিকে পরিস্থিতি ভয়াবহের দিকে যেতে পারে। তাই মে মাসটা বাংলাদেশের জন্য খুবই ‘ক্রুশিয়াল ও ক্রিটিক্যাল’। মে মাসে সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে। আগামী দুই সপ্তাহের জন্য সব ধরনের সামাজিক, শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। এজন্য মানুষের খাবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া যাবে না। প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষকে পরীক্ষা করার প্রস্তুতি এখনই দরকার। কারণ করোনা আক্রান্ত ৩০ থেকে ৫০ ভাগ লোক লক্ষণবিহীনভাবে ঘোরাফেরা করছে এবং অন্যদের সংক্রমিত করছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াচ্ছি। আশা করছি, মে মাসের শুরু থেকে প্রতিদিন ৫ হাজার মানুষের পরীক্ষা করা যাবে। তাছাড়া করোনা কিটের কোনো সংকট নাই বলে তিনি জানান।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যখন পুরোপুরি সচল হবে এবং পরিবহন ব্যবস্থা যখন চালু হবে, তখন বোঝা যাবে যে আসলে সংক্রমণ কতটুকু বাড়ছে। তখন কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন এবং চিকিত্সকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি সামনে আসবে। তাই এখন থেকে প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক কমিটি গঠন করে খাদ্য ও পরীক্ষার ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা যেমন বাড়বে তেমনি দুর্ভিক্ষজনিত মৃত্যুর ঝুঁকিও তৈরি হবে।
প্রসঙ্গত, কঠোরভাবে লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন মেনে চলায় চীনের পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়া সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত ভিয়েতনামে করোনায় কেউ মারা যায়নি। সাড়ে ৯ কোটি মানুষের সে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ২৬৮।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, অসুস্থ হওয়ার তথ্য গোপন করায় করোনা ভাইরাস বেশি ছড়াচ্ছে। এটা খুব বিপজ্জনক। তাই দয়া করে কেউ তথ্য গোপন করবেন না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, যেহেতু লকডাউন কেউ মানছেন না, তাই আগামী মে মাস আমাদের জন্য খুবই ক্রিটিক্যাল হতে পারে। যেসব এলাকায় রোগী শনাক্ত হয়েছে সেখানে শতভাগ লকডাউনের পাশাপাশি এসব রোগী কোথায় এবং কার কার সঙ্গে মিশেছেন সেটি বের করতে হবে। আর পরীক্ষার পরিধি বাড়াতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন বলেন, মে মাস খুবই ক্রিটিক্যাল। আমরা লকডাউন মানি না, কোয়ারেন্টাইন মানি না। এতে বিপদ বাড়ছে। করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা কয়েক গুণ বৃদ্ধি করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, হোম কোয়ারেন্টাইন কেউ মানেন না। তাই হোম কোয়ারেন্টাইনের পরিবর্তে ভিয়েতনামের মতো সরকারি কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ মহামারি নিয়ন্ত্রণে আমাদের প্রস্তুতিগুলো কোন পর্যায়ে রয়েছে তা-ও স্পষ্ট নয়। এখন সব কিছু খোলাসা করতে হবে। যদি পরীক্ষার কাজটি ব্যাপক আকারে হয় তাহলে বোঝা যাবে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। যদি পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়ানো না যায়, তাহলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।