মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ করোনাভাইরাসের প্রভাবে হবিগঞ্জে একদিকে দিনমজুর, রিকশাশ্রমিক, ঠেলাওয়ালা, রেস্তোরাঁকর্মী, ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীসহ খেটে খাওয়া মানুষেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে ধান কাটার জন্য শ্রমিক না পেয়ে পাঁকা ধান ঘরে তুলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি কৃষক। এমন অবস্থায় বেকার হয়ে পড়া প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে ধান কাটার কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করেছে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন।জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় এই ১৫ হাজার মানুষ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছেন। বিনিময়ে তাঁরা একদিকে কৃষকের কাছ থেকে মজুরি পাচ্ছেন, অন্যদিক জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে মিলছে ত্রাণ সহায়তা। ধান কাটতে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে প্রশাসন।
জেলার আশপাশের উপজেলায় ধান কাটতে যাচ্ছেন এই মৌসুমি শ্রমিকেরা। বিকল্প ব্যবস্থায় ধান কাটার শ্রমিকের সংকট দূর হওয়ায় খুশি কৃষক আবার কর্মসংস্থান পেয়ে খুশি হয়েছেন ১৫ হাজার বেকারও। শুধু জেলাতেই নয়, প্রায় ৩শ’ শ্রমিককে ধান কাটার জন্য পাঠানো হয়েছে সুনামগঞ্জেও।জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জের নয় উপজেলায় এবার বোরো আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। মোট জমির মধ্যে হাওর অধ্যুষিত আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই, নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলায় ৪৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আর সেখানে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন। হাওরের ২৫ শতাংশ ধান এরই মধ্যে কাটা হয়েছে। সমতল ভূমির প্রায় ১১ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে ধান কাটা চলছে।উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহ আগে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে পরামর্শ সভায় বসেছিলেন। সেখানে করোনাভাইরাসের কারণে বেকার ও আয়হীন হয়ে পড়া ব্যক্তিদের ধান কাটায় নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের পর ইউনিয়ন ভিত্তিক শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করা হয়। সে তালিকাভুক্ত শ্রমিকদের মাধ্যমেই এখন পুরো জেলায় বোরো ধান কাটার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাঁরা ধান কাটতে যাচ্ছেন, তাঁদের পর্যাপ্ত ত্রাণ সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে।
ধান কাটায় নিয়োজিত শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, করোনার কারণে আয়হীন হয়ে পড়ে তাঁরা যখন অসহায় হয়ে পড়েছিলেন, তখন জেলা প্রশাসনের বিকল্প প্রস্তাব পেয়ে তাঁরা সাময়িকভাবে পেশা বদল করেছেন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় তাঁদের পরিবহনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। ২০ থেকে ৩০ জন করে বিভক্ত হয়ে তাঁরা কৃষকদের জমিতে টাকা ও ধানের বিনিময়ে রোজ বন্দী নিযুক্ত হয়ে ধান কাটছেন। আর প্রণোদনা হিসেবে তাঁরা ও তাঁদের পরিবার জেলা প্রশাসনের ত্রাণ সুবিধা পাচ্ছে।জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের আহ্বানে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক ধান কাটায় নিয়োজিত হয়েছেন। এর বাইরে হাজারো স্বেচ্ছাসেবী এ কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবীরা ছাড়া অন্য শ্রমিকেরা কাজের বিনিময়ে কৃষকদের কাছ থেকে টাকা তো পাচ্ছেনই, এর বাইরে তাঁদের প্রণোদনা হিসেবে জেলা প্রশাসন চাল, ডাল, তেল, আলুসহ নানা খাদ্যসামগ্রী ত্রাণ হিসেবে দিচ্ছে।
এমনকি এসব শ্রমিকদের সংশ্লিষ্ট জমিতে যাতায়াতের বিষয়টিও বিনা মূল্যে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় করা হচ্ছে। বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস ও যানবাহনের মাধ্যমে এসব শ্রমিকদের জমিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। এবার বোরোর ভালো ফলন হলেও সেসব কাটা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে ভেবে কূল পাচ্ছিলাম না। অবশেষে শ্রমিক সংকট দূর করতে এই বিকল্প উদ্যোগ নিই।’ জেলা প্রশাসক আরও বলেন, পর্যাপ্ত শ্রমিক এখন জেলায় রয়েছেন। শ্রমিক সংকট না থাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তর আগাম বন্যার যে পূর্বাভাস দিচ্ছে, এর আগেই জেলার পাকা ধান কেটে ফেলা পক্ষে সম্ভব।