মিজানুর রহমান মিলন,সৈয়দপুর প্রতিনিধিঃ
করোনাভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায়
মানুষজন ত্রাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে। আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের হামুরহাট–তারাগঞ্জ সড়কের দু পাশে ওই মানববন্ধন করা হয়। ঘন্টাব্যাপি ওই মানববন্ধনে ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন এলাকার দু শতাধিক নারী পুরুষ অংশ নেয়। এসময় তারা ত্রাণের স্লিপ বিক্রি করার অভিযোগে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আজম আলী সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত ফেস্টুন প্রদর্শন করেন।
এদিকে সৈয়দপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতির টাকার বিনিময়ে ত্রাণের স্লীপ বিতরণের ঘটনাটি বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
সুত্র জানায়,করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষজনের পাশে দাড়াতে সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। গোটা সৈয়দপুর উপজেলায় চলছে সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম। এরই অংশ হিসেবে উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নেও কর্মহীনদের মাঝে সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়। কিন্তু ওই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন এলাকার অনেকেই খাদ্য সহায়তা না পাওয়ায় আজ শনিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘন্টাব্যাপী হামুরহাট- তারাগঞ্জ রোডে মানববন্ধন করেন। এসময় তারা ত্রাণ প্রদানের দাবিতে এবং ১নং ওয়ার্ডের খালিশা গ্রামের কর্মহীন মানুষজনের মাঝে টাকার বিনিময়ে ত্রানের স্লীপ বিতরণ করায় স্লীপ বাণিজ্যের প্রতিবাদে শ্লোগান দেয়াসহ স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আজম আলী সরকারের বহিস্কারের দাবিতে প্লাকার্ড প্রদর্শন করা হয়। মানববন্ধনে অংশ নেয়া অসহায় মানুষজন জানান, বর্তমান সঙ্কটময় মূহুর্তে সরকার কর্মহীন অসহায় জনগনের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করলেও বিভিন্ন অনিয়মের কারণে অনেক অসহায় পরিবার সরকারের খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এছাড়া টাকার বিনিময়ে ত্রাণের স্লীপ প্রদান করায় সরকারের মহৎ এ কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। তারা প্রকৃত অসহায় মানুষজনকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করাসহ স্লীপ বাণিজ্য করা উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আজম আলী সরকারের বহিস্কার দাবি করেন।
এদিকে খাতামধুুপর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের খালিশা গ্রামে সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য অসহায়দের তালিকা করা হলেও স্লীপ বিতরণের সময় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আজম আলী সরকার ২৫ জন নারী পুরুষের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নেয়ার ঘটনাটি ফাঁস হয়ে পড়ে সর্বত্র। গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সর্বমহলে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। এনিয়ে পক্ষ বিপক্ষে মন্তব্য উঠে আসে ফেসবুকে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া স্লীপ বাণিজ্যের ঘটনায় একটি পক্ষ আজমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দাবি করলেও অপরপক্ষ ঘটনাটি সত্য বলে দাবি করেন। তারা এমন কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকায় দলের সুনাম রক্ষায় তাঁকে বহিস্কারের দাবি জানান।
এনিয়ে অনলাইনে আজম আলীর বক্তব্য আসে স্লীপ দেয়ার সময় নাকি তেল খরচের জন্য ১০০ টাকা করে নিয়েছেন। তবে তিনি বলেন এসব টাকা তাদের মাঝে দিগুন হারে টাকা ফেরত দেয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আজম আলী সরকারের মন্তব্য জানতে গতকাল শুক্রবার রাতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোন মন্তব্য জানা যায়নি। তবে তার সমর্থিতদের সুত্র জানায় সরকারি খাদ্য সহায়তার স্লীপ বিতরনের সময় টাকা নেয়ার অভিযোগটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আজমের প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র করে এমন বানোয়াট অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
এব্যাপারে গতকাল শুক্রবার রাতে নীলফামারী জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নীলফামারী সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দীপক চক্রবর্তির সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন টাকার বিনিময়ে ত্রাণের স্লীপ বিতরনের সংবাদটি গনমাধ্যমের মাধ্যমে শুনেছেন। তিনি বলেন বর্তমান সঙ্কটময় মূহুর্তে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগনকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করাসহ তাদের পাশে দাড়াতে বিরামহীন কাজ করতে যাচ্ছেন। সেখানে এমন ঘটনা সত্যিই নিন্দনীয়।
তিনি বলেন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পরামর্শে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরদিকে আজ শনিবার সকালে এ ঘটনাকে সাজানো দাবি করে আজম আলী সরকার সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে জানা গেছে।