মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাংক বন্ধ থাকা এবং আর্থিক সংকটের কারণে দূর্ভোগে পড়েছেন হবিগঞ্জের প্রি-পেইড মিটার গ্রহকরা। কার্ডে টাকা না থাকায় অন্ধকার হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। আদিমকালের সেই কুপির বাতি দিয়েই চলছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ অফিসে ধর্ণা দিয়েও কোন সমাধান হচ্ছে না বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়- হবিগঞ্জ শহর ও আশপাশ এলাকায় হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর গ্রহক সংখ্যা ২৪ হাজার। এরমধ্যে ৫০ শতাংশ গ্রাহকই এখন প্রি-পেইড মিটারের আওতাধিন। ঢাকা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রি-পেইড মিটার কার্ড রিচার্জ করতে হয়। ঢাকা ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে কার্ড রিচার্জের একমাত্র ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ গ্রাহকই বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে কার্ড রিচার্জ করার নিয়ম জানেন না। ফলে কার্ড রিচার্জে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
আবার গ্রাহকদের অভিযোগ রয়েছে- সেবার জন্য হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড অফিসে গিয়েও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না।অন্যদিকে, অনেক গ্রাহকই নি¤œ মধ্যবিত্ত। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়া ওইসব পরিবারের হাতে টাকা না থাকায় কার্ড রিচার্জ করতে পারছেন না। ফলে দিনভার বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে তাদের। মিটারে টাকা শেষ হওয়ার পর ৪/৫ দিন বিকেল ৪টার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও পরবর্তীতে আর রিচার্জ ঝাড়া বিদ্যুৎ দেয়া হয় না। ফলে অনেক পরিবারই এখন বিদ্যুৎবিহীন কুপি দিয়ে রাত্রি যাপন করছেন।এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ শহরের চিড়াকান্দি এলাকার সিএনজি অটোরিকশা চালক মো. তমিজ উদ্দিন বলেন- ‘এক মাস ধরে গাড়ি নিয়ে বের হতে পারছি না। হাতে একটা টাকাও নেই। বিভিন্ন স্থান থেকে ধার-কর্জ করে সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু এখনও বাসা ভাড়াই দিতে পারছি না।
এরমধ্যে বিদ্যুতের কার্ড শেষ হয়ে গেছে। টাকা না থাকায় রিচার্জ করতে পারছি না। তাই অন্ধকারেই থাকতে হচ্ছে।’ সবুজবাগ এলাকার ব্যবসায়ি মো. জসিম উদ্দিন বলেন- ‘করোনার কারণে আগামী তিনমাস বিদ্যুৎ বিল না দিলেও কোন জরিমানা দেয়া লাগবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকার। কিন্তু আমরা যারা প্রি-পেইড মিটার গ্রাহক, তাদের জন্য কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। এ অবস্থা বর্তমান সময়ের টানা-পোড়ানের মধ্যে প্রি-পেইড কার্ড রিচার্জ করা আমাদের কাছে অনেকটা বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে।’ শায়েস্তানগর এলাকার বাসিন্দা মো. আরিফ চৌধুরী বলেন- ‘হঠাৎ করে বিদ্যুৎ প্রি-পেইড মিটার কার্ডের টাকা শেষ হয়ে গেছে। এখন ব্যাংক বন্ধ থাকায় কোন দোকানেই কার্ড রিচার্জ করা যাচ্ছে না। অফিসে যোগাযোগ করলে তারা বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে রিচার্জ করতে বলে। কিন্তু অনেকবার ট্রাই করেও রিচার্জ করতে পারিনি।তিনি বলেন- ‘অফিসে গেলেও অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তারা সঠিক সেবা দিতেই চায় না। খারাপ আচরণ করে।দীগন্ত পাড়া এলাকার রুবেল দাস বলেন- ‘বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে কার্ডে টাকা ডুকাতে পারিনি। পরে বুঝার জন্য অফিসে গেলে একটি কাগজ ধরিয়ে দিলো। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা আমাকে ধমক মেরে বিদায় করে দিল।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকার বলেন- ‘ঢাকা ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে সাময়িক এ সমস্যাটা হচ্ছে। যেহেতু আমরা সবাই একটি মহা দূর্যোগের মধ্যে আছি সেহেতু সবাইকেই একটু কষ্ট সহে নিতে হবে। এছাড়া প্রি-পেইড মিটার কার্ড আনলিমিটেড করার কোন নির্দেশনা এখনও আসেনি।’