মিজানুর রহমান মিলন সৈয়দপুর প্রতিনিধিঃ
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সৈয়দপুরে স্থানান্তর করা পাইকারি সবজি বাজার পরিদর্শন করে আড়তদার ও পাইকারি কাঁচা ও পাঁকামাল ব্যবসায়ীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ব্যবসা পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়ে সকলকে আরও সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন সৈয়দপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) পরিমল কুমার সরকার। আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহরের কয়া মিস্ত্রিপাড়া বাইপাস সড়ক সংলগ্ন সৈয়দপুর কাঁচা ও পাঁকামাল পাইকারি বাজার পরিদর্শন শেষে ব্যবসায়ী ও অাড়ত দারদের সাথে কথা আলাপ কালে ওই নির্দেশ দেন তিনি।
সুত্র জানায়, সারাবিশ্বের মত বাংলদেশেও করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সৈয়দপুরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সকলের মাঝে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে উপজেলা ও থানা প্রশাসনসহ পৌর পরিষদ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে এড়াতে উপজেলা ও থানা প্রশাসন এবং পৌর পরিষদের ত্রি-পক্ষীয় বৈঠকে শহরে লোকসমাগম এড়াতে পাইকারি ও খুচরা কাঁচা বাজার, মাছ,মাংস এবং মুরগীর বাজার অন্যত্র স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
গত সপ্তাহের ওই সিদ্ধান্তের পরই গত শনিবার শহরের নয়াবাজারস্থ কাঁচামালের পাইকারি বাজারটি কয়া মিস্ত্রিপাড়া বাইপাস সড়ক সংলগ্ন সৈয়দপুর পাইকারি কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির নিজস্ব মার্কেটে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে শুক্রবার খুচরা সবজি ও মাছ বাজারটি আধুনিক পৌর সবজি বাজার থেকে সরিয়ে সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এবং মাংস ও মুরগীর বাজারটি গোয়াল পাড়ার বাজার থেকে সরিয়ে বিমানবন্দর সড়কস্থ ফাইভ স্টার মাঠে নেয়া হয়। সুত্রটি জানায় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ায় শহরে লোক সমাগম অনেকটাই কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বাজারের পরিস্থিতি দেখতে কয়া মিস্ত্রিপাড়াস্থ পাইকারি কাঁচামালের বাজার পরিদর্শনে যান উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পরিমল কুমার সরকার।
এসময় তিনি ওই বাজারের বিভিন্ন পাইকারি দোকান এবং বাজার ঘুরে দেখেন। পরে সৈয়দপুর পাইকারি কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. মিজানুর রহমান লিটন ও সাধারন সম্পাদক তোফায়েল মোহাম্মদ আজমের সাথে মার্কেটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। এসময় উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পরিমল কুমার সরকার ওই বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে আমরা সকলেই উদ্বিগ্ন। তারপরেও সরকারি নির্দেশনা পালনে আমরা সকলেই সচেস্ট রয়েছে। তিনি সকলকে আরও সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বেচাকেনার নির্দেশনা দেন। তিনি কাঁচামাল পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা নির্ভয়ে ব্যবসা পরিচালনা করুন, নিরাপত্তা আমরা দিব। তবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা মানতে সকলের প্রতি আহবান জানান। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল হাসনাত খান,সৈয়দপুর পাইকারি কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি মোস্তফা মারুফ বিন কবির,সাংগঠনিক সম্পাদক বজলার রশীদ বাবলু, সংগঠনের সদস্য সাজিদ,সাহিদ,আরমানসহ গণমাধ্যম কর্মী।
এদিকে কাঁচামাল পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায় অন্যরকম চিত্র। বাজারের ৯২টি শেডে রয়েছে পেঁয়াজ, আলু,মরিচসহ বিভিন্ন মালামাল। চারিদিকে ক্রেতা বিক্রেতাদের হাক ডাক। সবাই বেচাকেনায় ব্যস্ত৷ আর ক্রেতা বিক্রেতারা যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বেচাকেনা করেন সেজন্য সভাপতি মিজানুর রহমান লিটন ও সাধারন সম্পাদক তোফায়েলমোহাম্মদ আজম সার্বক্ষণিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এব্যাপারে তারা বলেন, নতুন কাঁচামালের পাইকারি বাজারে যাতে কোন রকম সমস্যা না হয় সেজন্য তাদের সলগঠনের সকলেই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া বাজারটি চালু হওয়ায় এখানে প্রায় তিনশত মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে।
এদিকে নয়াবাজারস্থ পাইকারি সবজি বাজারটি শহরের কয়া মিস্ত্রিপাড়ার বাইপাস সড়কের পাশে স্থানান্তর হওয়ায় শহরে লোকসমাগম ও যানজটও কমেছে ব্যাপক। অপরদিকে
নতুন ওই পাইকারি সবজি বাজারে কাঁচামালের যেমন আমদানি হচ্ছে তেমনি বেচাকেনাও হচ্ছে বেশ। সৈয়দপুরের আশেপাশের জেলা উপজেলার কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বাজারে পরিবেশ।
ওই বাজারের ব্যবসায়ী সাহিদ, আরমান ও সাজিদ জানান,নতুন হিসেবে এ বাজারে কাঁচামালের আমদানি ও বেচাকেনা ভালই হচ্ছে। তারা বলেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পাইকারি এ বাজারটি আরও জমজমাট হয়ে উঠবে।
প্রসঙ্গতঃ সৈয়দপুর পাইকারি কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির কেনা নিজস্ব জমিতে ওই পাইকারি বাজারটি গড়ে তোলা হয় গত ২০১৫ সালে। এতে প্রায় ১০০টি দোকান (শেড) রয়েছে।
প্রায় সোয়া একর জমি কেনাসহ বাজারের দোকান নির্মাণে ব্যয় হয় আনুমানিক দেড় কোটি টাকারও বেশী। নির্মান কাজ শেষে এ মার্কেটের উদ্বোধন হয় পরের বছর ২০১৬ সালে। এরপর নির্মাণ হওয়া ওই মার্কেট চালু করার উদ্যোগ নেয়া হলেও অদৃশ্য কারণে সেটি থমকে যায়। তখন থেকে মার্কেটটি যাতে চালু না হয় সেজন্য একটি মহল তৎপর থাকে।
অবশেষে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে লোকসমাগম এড়াতে এবং যানজট কমাতে প্রশাসনের সিদ্ধান্তে শহরের নয়াবাজার থেকে পুরাতন পাইকারি কাঁচামালের বাজারটি কয়া মিস্ত্রিপাড়া বাইপাস সড়কের পাশে স্থানান্তর করা হয়। প্রশাসনের প্রশংসনীয় এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ায় সৈয়দপুরবাসীসহ সৈয়দপুর পাইকারি কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সকল সদস্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন উপজেলা ও থানা প্রশাসনসহ পৌর পরিষদের প্রতি।