আব্দুল আওয়াল : করোনার পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশের সব কল-কারখানা গুলো বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ফলে শহরে যাওয়া কর্মহীন হাওরাঞ্চলের মানুষগুলো এবার শহর ছেড়ে দলবেঁধে ফিরতে শুরু করেছে গ্রামে।
কেউ আসছে গ্রামের পরিবারের কাছে আবার কেউ কেউ শহরে থাকা সহপরিবারে সড়ক পথ বন্ধ থাকায় বিকল্প পথে। এতে গ্রামে বাড়ছে করোনা ঝুঁকি। গ্রামের সচেতন মহলে মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এ দিকে জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম নেত্রকোনাকে লকডাউন ঘোষণা করেছেন।
আইসিইইডিআর এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনা শনাক্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ ,ঢাকা ও গাজীপুর জেলায়। আর এই জেলাগুলো থেকে মানুষ আসায় এতেই ঘটছে বিপত্তি। শহর ফেরত মানুষেরা কোন রকম তোয়াক্কা করছেন না সরকারি নির্দেশনা। হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনে অবাধে চলাফেরা করছেন তারা। যাচ্ছেন পরিচিতদের বাসায়, দিচ্ছেন বন্ধু ও প্রতিবেশীদের সাথে আড্ডা।
এ দিকে উপজেলা প্রশাসন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজ বুক ফেইজ, বিভিন্ন বাজারে হ্যান্ড মাইকিং করে সর্তক করছেন যারা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন তারা ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে স্ব স্ব ইউনিয়নে মাইকিং করে সচেতনতা করার পরেও শহর ফেরত মানুষরা তা মানতে নারাজ।
গত এক সাপ্তাহে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ অন্যান্য জায়াগা থেকে থেকে এসেছেন। আরো আসার পথে রয়েছে। এদের অনেকের খবর এখনও পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক জানেন না। যাদের বিষয়ে প্রশাসক খোঁজ খবর পাচ্ছে তাদেরকে শুধু হোম কোয়ারান্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু তাদের কোন নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। সাধারণ সর্দি, কাশি ও জ্বর নিয়ে যারা বাড়িতে অবস্থান করছেন তারাও হাসপাতালে কোন যোগাযোগ করছেন না। স্বাস্থ্য কর্মীদেরকে দেখে তারা গা ঢাকা দেন।
আর শহর থেকে আগতরা কোনো হোম কোয়ারান্টাইন না মেনে অবাধে চলাফেরা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে করে প্রশাসন কঠোর নজরদারী না বাড়ালে করোনা ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে করছেন সচেতনতা মহল।
হাওর বেষ্টিত মদন উপজেলা পৌরসভাসহ ৮টি ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামগুলোতে খবর নিয়ে জানা যায়, এক ফসলী বোরো ধান উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল ও দিন মজুর অধিকাংশ পরিবার। বার বার ফসল ডুবিসহ নানান কারনে শ্রমিক পরিবার গুলো ঢাকা, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহর মুখি হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ফখরুল হাসান চৌধুরী টিপু বলেন, যারা ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন শহর থেকে এসেছে তাদেরকে আলাদাভাবে রাখতে আমাদের লোকজনের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের বলা হয়েছে। আর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আমাদের স্বাস্থ্য কর্মীরা সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছেন । এখন পর্যন্ত সর্দি, কাশি ও জ্বর এর লক্ষণ আগতদের মাঝে পাওয়া যায় নি এবং আমরা এ পর্যন্ত ৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠিয়েছি এর মধ্যে দুজনের তথ্য পেয়েছি। কারও করোনা ভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যায় নি। বাকি দুজনের তথ্য এখন ও আসেনি।
ওসি মোঃ রমিজুল হক জানান, শহরফেরত মানুষগুলোকে স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারসহ সচেতন মানুষের সহযোগিতায় হোম কোয়ারান্টাইন এ থাকতে বলেছি। তাদের বিষয়ে কঠোর নজরদারী রয়েছে। যদি কেউ হোম কোয়ারান্টাইন না মানে, স্বাস্থ্য প্রশাসক এ বিষয়ে জানালে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ওয়ালীউল হাসান জানান, আমরা প্রতিটি বাজারে বাজারে উপজেলা প্রশাসন,পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর লোকজন মাইকিং করে সবাইকেই সর্তক করছি। আমরা এ বিষয়ে খোঁজ খবর রাখার জন্য ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি গঠন করেছি। মসজিদের ইমামদেরকে এ বিষয়ে বলেছি মসজিদে মসজিদে মাইকিং করে বিষয়টি জানানোর জন্য। কেউ আসলে যেন তারা আমাদেরকে জানায় এবং আগতরা যেন হোম কোয়ারান্টাইনসহ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলেন। না হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।