ডায়াবেটিস রোগীদের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকি ও করণীয়

0
473
ঢাকার আরও যেসব এলাকা লকডাউন

খবর৭১ঃ সারা পৃথিবী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহামারিতে বিপর্যস্ত। এটি সার্স কোভ২ ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত এবং মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ। ১১ এপ্রিল বিকাল পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, বিশ্বের ২০৬টি দেশ বা অঞ্চলে মোট ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৬৩১ জন মানুষ এ ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং কোভিড-১৯-এ মৃত্যুবরণ করেছেন ১ লাখ ২ হাজার ৭৩৪ জন মানুষ। বাংলাদেশে মোট ৪৮২ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করেছে সরকার, আর ৩০ জন মারা গিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।

যে কোনো মানুষই করোনাভাইরাসের শিকার হতে পারেন; তবে ডায়াবেটিসের মত দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা লোকদের এ ঝুঁকি অনেক গুণ বেশি। হার্ট ফেইলার, কিডনি ফেইলার, হাঁপানি ইত্যাদিতে যারা ভোগছেন তারাও অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে চলছেন।

ডায়াবেটিসের রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, রোগ হলে তার সঙ্গে লড়াই করার সক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলশ্রুতিতে, একই সঙ্গে বসবাস করা অন্যান্য মানুষের তুলনায় ডায়াবেটিস থাকলে আপনি চট করেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন। যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি তারা করোনাভাইরাসের সহজ শিকার।

ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণের মাত্রা (এইচবিএওয়ানসি) সঠিকভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বোঝাতে সহায়তা করতে পারে। অর্থাৎ যার ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ যত খারাপ (এইচবিএওয়ানসি যত বেশি) তার রোগে ভোগার সম্ভাবনা তত বেশি। বাংলাদেশের প্রায় ৮০% ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তের গ্লুকোজ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি (তাদের সবাই ভাইরাস সংক্রমণের বাড়তি ঝুঁকিতে)। আবার যারা অনেক বছর ধরে ডায়াবেটিস নিয়েই বেঁচে আছেন, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও পর্যুদস্ত। সব চেয়ে নাজুক অবস্থায় আছেন যে সব ডায়াবেটিসের রোগীর কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস পেয়ছে, একই সঙ্গে হৃদযন্ত্রও যথেষ্ট রক্ত পরিসঞ্চালনে ব্যর্থ এবং রক্তের গ্লুকোজ বেশি।

বরাবরের মতোই, সব ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তের গ্লুকোজের মাত্রায় নিয়ে আসা অতি জরুরি এবং যারা মুখে সেবনের ওষুধ নির্ভরতা কমিয়ে ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করতে থাকবেন, তার বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন।

করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) মহামারীতে ডায়াবেটিস রোগীর আশু করণীয়:

করোনাভাইরাস সংক্রমণের সামান্যতম লক্ষণ দেখা দিলেও সরকার নির্দেশিত কেন্দ্রগুলোতে রোগ শনাক্তকরণ ও পরবর্তী সেবার জন্যে দ্রুত চলে যাওয়া।

কালক্ষেপণ না করে রক্তের গ্লুকোজ লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে (এইচবিএওয়ানসি <৭%) যাবার উদ্যোগ নেয়া। যদি লক্ষণ থাকে (জ্বর, কাশি) তাহলে নিজেকে নিজে আলাদা করাই উত্তম। শরীর বেশি খারাপ না হলে হাসপাতালে না যাওয়াই ভালো। ৮০% মানুষ হাসপাতালে ভর্তি ছাড়াই ভালো হয়ে যাবে। ১৪ দিন নিজেকে আইসোলেট করে থাকবেন। বয়স্ক লোকজনেরর মধ্যে মৃত্যুর হার সব চেয়ে বেশি। বয়স্ক কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে ভর্তি করার কারণ আছে, কারণ তাদের অনেকেরই আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে। স্যানিটাইজার ভালো হলেও মার্কেটের অধিকাংশ স্যানিটাইজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যালকোহল নাই (যেটা পান করে ওই অ্যালকোহল না)। সাবান দিয়ে হাত ধোন, বেশি বেশি ধোন। অতিরিক্ত করতে চাইলে বরং হেক্সাসল টাইপের কিছু ব্যবহার করুন। ঘরের বাইরে স্যানিটাইজার ব্যবহার করলেও মুখে হাত দিবেন না যতক্ষণ না কোথাও গিয়ে হাত ধুতে পারবেন। বিদেশ ফেরত বন্ধু বা আত্মীয়কে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) করে দিন। ভালো হলে ভালো। কোনো রকম কাশি/জ্বর বা গলা ব্যথা হলে গৃহে বিচ্ছিন্ন হয়ে থেকে সরকারি হটলাইনে যোগাযোগ করতে হবে। প্রয়োজন সাপেক্ষে নির্ধারিত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। বড় সমাবেশ/লোক সমাগম থেকে দূরে থাকা বাধ্যতামূলক। কোনো কনফারেন্স বা পার্টিতে যাবেন না। বাসায় বা ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here