মিজানুর রহমান মিলন,সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে ত্রাণ সামগ্রী না পাওয়ার অভিযোগ এনে নীলফামারীর সৈয়দপুরে বিভিন্ন এলাকার এলাকার কর্মহীন মানুষজন বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। আজ শনিবার এসব বিক্ষুদ্ধ কর্মহীন মানুষ অবিলম্বে তাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের দাবিতে সৈয়দপুর পৌরসভার পৃথক পৃথক স্থানে সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করেছেন। পৃথক পৃথক ঘটনায় বিক্ষুব্ধরা ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শাহিন হোসেন ও ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আজগার আলীর ওপর চড়াও হয়। এসময় তাদেরকে লাঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পৌর কাউন্সিলররা। আজ শনিবার সকালে শহরের ১নং ওয়ার্ডের উত্তরা আবাসন এলাকায়, ৩নং ওয়ার্ডের রসুলপুরে ও ৯নং ওয়ার্ডের হাতিখানা মহুয়া গাছ এলাকায় পৃথক পৃথক এসব ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরমধ্যে হাতিখানা এলাকার ঘটনায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো.আজগার আলী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। সুত্র জানায়, পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ডের উত্তরা আবাসন এলাকার ১০০টি ব্লকে এক হাজার পরিবারের বসবাস।করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া ওই এলাকার অধিকাংশ পরিবার কোন ত্রাণ পায়নি বলে অভিযোগসহ কানা ঘুষা শুরু হয়। এরই প্রেক্ষিতে ত্রাণ বঞ্চিতরা বিক্ষুব্ধ হয়ে নিজ নিজ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে। পরে তারা সৈয়দপুর- -নীলফামারী সড়কের ঢেলাপীর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে।
আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে ওই এলাকায় প্রায় দেড় ঘন্টা অবরোধ করে তারা। ঢেলাপীর উত্তরা আবাসনের বিভিন্ন বয়সী সহস্রাধিক মানুষের এ অবরোধের কারণে সৈয়দপুর-নীলফামারী সড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় ওই সড়কের উভয় দিকে ওষুধ, পণ্যবাহী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ীসহ বিভিন্ন রকম যানবাহন আটকা পড়ে। এ সময় অবরোধকারীরা অবিলম্বে তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের দাবি জানিয়ে সেখানে বিক্ষোভ করতে থাকেন। অবরোধের খবর পেয়ে আইন-শৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাসিম আহমেদ সেখানে গিয়ে অবরোধ সৃষ্টিকারী উত্তরা আবাসনের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের কথাও ধৈর্য সহকারে শোনেন। এ সময় তিনি ঢেলাপীর উত্তরা আবাসনের বাসিন্দাদের তালিকা করে অবিলম্বে ত্রাণ বিতরণের আশ্বাস দিলে অবরোধকারীরা তাদের অবরোধ তুলে নেয়। পরে ওই সড়কে চলাচল স্বাভাবিক হয়। অবরোধ চলাকালে ওই এলাকার বিক্ষুদ্ধ লোকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহিন হোসেনকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শাহিন হোসেনের অভিযোগে জানা গেছে।
এদিকে সকালে ত্রাণের দাবিতে পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বসুলপুর এলাকার কর্মহীন মানুষ শহরের চিনি মসজিদ এলাকায় মানববন্ধন করেন। খবর পেয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেয়া লোকজনদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া রসুলপুর মহল্লার বাসিন্দা সাথী, আরিফ, আলিম,রবিন,আরমান ডলি,সামিনা তামিম, ফয়সাল জানান, করোনাভাইরাসের কারণে তারা সকলেই গত প্রায় পনের দিনের বেশি সময় ধরে তারা ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। সরকারি নির্দেশ মেনে ঘরে অবস্থান করায় তারা কর্মহীন হয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ত্রাণের জন্য তারা প্রায় প্রতিদিনই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা তাদের কোন রকম ত্রাণ সামগ্রী দিচ্ছেন না। এ সময় তারা অভিযোগ করেন এ অবস্থায় এলাকার দুস্থ মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। কর্মহীন থাকায় তারা পরিবার সদস্যদের একবেলা খাবারেরও কোন ব্যবস্থা করতে পারছেন না। ত্রাণের দাবিতে গতকাল শুক্রবার বিকেলেও রসুলপুর এলাকার লোকজন ত্রাণের দাবিতে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এদিকে এর আগে ৯নং ওয়ার্ডের হাতিখানা মহুয়া গাছ এলাকায় ত্রাণের চাল না পাওয়ার অভিযোগ করে ওই এলাকার কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আজগার আলীকে লাঞ্চিত করে। খবর পেয়ে এলাকার লোকজন উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় কাউন্সিলর মো. আজগার আলী সৈয়দপুর থানায় একটি অভিযোগ করেছেন।
এদিকে ওইসব এলাকার কাউন্সিলররা তাদের বিরুদ্ধে ত্রাণ না দেয়া প্রসঙ্গে লোকজনের অভিযোগের সত্যতা নেই বলে দাবি করে বলেন তারা যেসব বরাদ্দ পেয়েছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তারপরেও সে ত্রাণ যথাযথভাবে বিতরণ করেছেন। তারা বলেন আবারও বরাদ্দ এলে প্রকৃত অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হবে।