মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বৈশাখ মাস অতি সন্নিকটে। বৈশাখ মানেই হাওরাঞ্চল মানুষের মধ্যে এক অন্যরকম অনুভূতি। ধান গাছের পরিচর্চা করার পর ফসল গোয়ালে তোলার মোক্ষম সময়। বৈশাখ মাসকে ঘিরে কৃষাণ-কৃষাণীর মধ্যে যখন আনন্দে আত্মহারা হওয়ার সময়, তখনি করোনা ভাইরাস নামক প্রাণঘাতি এ জীবাণু সারা বিশ্বটাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এর বাইরে নন কৃষকরাও। আর ক’দিন পরই শুরু হবে সারা দেশে বৈশাখি ফসল গড়ে তোলার হিড়িক। সারা দেশে অঘোষিত লকডাউনের কারণে এক অঞ্চল থেকে অপর অঞ্চলে শ্রমিকরা আর যেতে পারবেন না। ফলে হবিগঞ্জে ধানকাটা শ্রমিকের অভাবে কৃষকের কষ্টের ফসল গোয়ালে তোলা চরমভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।এছাড়া করোনার কারণে দেশীয় শ্রমিকেরও আকাল দেখা দিবে। কৃষকরা এমনিতেই ধানের ন্যয্যমূল্য না পেয়ে ক্রমাগত ধুকছেন। গুণছেন লোকসানের পর লোকসান
।অনেকেই জমি-জমা কমমূল্যে বিক্রি করে পেশা বদল করেছেন। আর যারা এখনো বাপ-দাদার চিরায়ত পেশা কৃষিতে আছেন তারাও বেশ ভালো নেই। হাওরাঞ্চল এলাকা নামে খ্যাত বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জে বৃহত্তর রংপুর থেকে প্রতি বছর হাজার-হাজার ধানকাটার শ্রমিক আসতো। তারা ফসল গোয়ালে তোলার আগ পর্যন্ত এ জনপদে অবস্থান করতো। ধানকাটা, মাড়াই, ধান শুকানোর কাজও এসব শ্রমিকরাই করতো।এ বছর করোনা মহামারির জন্য বাহির থেকে শ্রমিক আসা অনেকটাই অনিশ্চিত। এ ক্ষেত্রে চোখে সর্ষফুল দেখছেন কৃষকরা।এ ব্যাপারে বানিয়াচং যাত্রাপাশা মহল্লার কৃষক দিদারুল আলম বাবলু জানান, গত বছর আমরা ১৫০ কেদারা জমি করেছিলাম। বড় ধরণের লোকসান খেয়ে এ বছর ৫০ কেদারা জমি করেছি। একদিকে কৃষি উপকরণের মূল্য বেশি, অন্যদিকে ধানের ন্যয্যমূল্য নেই। কয়েক বছর যাবত ধান কাটা শ্রমিকের তীব্র অভাববোধ করছি। এ বছর করোনা ভাইরাসের জন্য শ্রমিক সঙ্কট আরও ঘনীভূত হলো। এ বছর বৃষ্টি না হওয়াতে ফসলও তেমন একটি ভালো হবে না মনে হচ্ছে। এছাড়া সরকারি গুদামে ধানও দেওয়া যায় না।তিনি বলেন- অনেক ফড়িয়া আছেন, কৃষিকার্ড কিনে নিয়ে লডারির মধ্যে কার্ড জমা দিয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত কৃষকরা সরকারকে ধান দেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সবদিক মিলিয়ে খুব কঠিন অবস্থায় আছি।উপজেলা উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মহিবুর রহমান জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে ধানকাটা শ্রমিকের চরম আকাল দেখা দিবে। এ ক্ষেত্রে অনেকটা ধানকাটা মেশিনের সাহায্য নিতে হবে। তা ছাড়া ধানি জমিতে পুকুর খনন দেওয়ার প্রবণতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কৃষি কাজে নেই এমন বিত্তশালীরা কমমূল্যে জমি ক্রয় করে হাওরে একের পর এক পুকুর খনন করছেন। ফলে ধানি জমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।