খবর৭১ঃ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলায় এখনই গোটাদেশ লকডাউন করার কথা বলছেন স্বাস্থ্যখাতের বিশেষজ্ঞরা। করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ধাপে থাকা বাংলাদেশের জন্য আগামী ১০-১৫ দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। আর একারণে সারাদেশকে এখনই লকডাউনের আওতায় আনা না হলে পরিসস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। একমাসের মাথায় এসে সোমবার পর্যন্ত তা বেড়ে দাড়িয়েছে ১২৩ জনে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক অর্থাৎ ৩৫ জন শনাক্ত হওয়ায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে।
বাংলাদেশে ধীরে ধীরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরো দেশ লকডাউন ঘোষণা করে সরকারের শক্ত অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার ঢাকার মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্স (বিসিপিএস) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তারা এই আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও বলছেন, করোনা ভাইরাস বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে তার বিস্তার বৃদ্ধি করছে। তাই আগামী ১০-১৫ দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে বিশেষজ্ঞদের আশ্বস্ত করেছেন।
দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গত ২৬ মার্চ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটি। এ ছুটির মধ্যেই শুরুর দিকে ধীরে ধীরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও গত দুই-তিনদিন ধরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রায় জ্যামিতিক হারে। গত তিন দিন ধারাবাহিকভাবে ৯, ১৮ এবং সর্বশেষ ৩৫ জন আক্রান্তের সংখ্যায় বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে গোটা দেশ লকডাউনের দাবি এসেছে। যদিও কোনো এলাকায় করোনা রোগী শনাক্ত হলে ওই এলাকা বিচ্ছিন্নভাবে লকডাউন করা হচ্ছে। এছাড়া ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শহরে প্রবেশ ও বের হতে না দেয়ার সিদ্ধান্তও কার্যকর করেছে প্রশাসন।
বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আহমেদুল কবীর সভায় বলেন, ‘দেশে সামনে কঠিন সময় আসছে। এখনই পুরো দেশে লকডাউন করা জরুরি। এখনই পুরো দেশ লকডাউন না করা হলে এই ভাইরাস আগামী ১০ দিনে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে তার বিস্তার বৃদ্ধি করছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিন আমাদের সবার জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনভাবেই আগামী ১৫ দিন আমরা যেন কেউই অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হই।’
একান্তই জরুরি কাজে কাউকে ঘরের বের হতে হলে মুখে মাস্ক ব্যবহার এবং সর্বোচ্চ সচেতন থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের (নিমস) পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ বর্তমান পরিস্থিতে তার উদ্বেগ জানিয়ে এখনি দেশে ‘শক্ত অবস্থান’ নেওয়ার অনুরোধ করেন। এছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা দেশের মানুষের কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এখনই শক্ত অবস্থানে যাওয়ার পরামর্শ দেন। চিকিৎসক পরিষদের নেতারা চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করার ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূর, বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, স্বাচিপ সভাপতি ইকবাল আর্সেনাল, সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজসহ বিভিন্ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নেতারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।