প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান পোশাক মালিকরা

0
412
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান পোশাক মালিকরা

খবর৭১ঃ বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশের তৈরি পোশাক কারখানা সাময়িক বন্ধ রাখা হবে কি না এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি শিল্প মালিকরা। এ বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয় মালিকপক্ষ ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেও সমাধানে আসতে পারেনি। তারা তাকিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামীকালের জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণের দিকে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তারা কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন শিল্প মালিকরা।

পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক ঢাকা টাইমকে বলেন, কারখানাগুলো তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবে। বিজিএমইএর কারখানা বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে না। শুধু সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

করোনাভাইরাসের কারণে পোশাক খাত স্থবির হয়ে গেছে জানিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘গত চার দিনে দেড় বিলিয়ন ডলার অর্ডার ক্যানসেল হয়েছে। এরপরও আমরা শ্রমিকদের আশ্বস্ত করছি তারা নির্ধারিত সময়েই বেতন পাবেন। রুবানা বলেন, এখন ধৈর্য ধরতে হবে। ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন। আমরা যেন তার ভাষণের জন্য অপেক্ষা করি। আমরা কোনো মতে আতঙ্কগ্রস্ত হব না।’ তিনি প্রধানমন্ত্রীর ওপর ভরসা রাখতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে গতকাল বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সদস্যদের নিয়ে এক জরুরি বৈঠক শেষে সংগঠনটির সভাপতি সেলিম ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আমাদের সদস্যদের অনুরোধ করেছি অনাহুত ফ্যাক্টরি চালিয়ে রিস্ক নেবেন না, ২৫ তারিখের মধ্যে সবাইকে গুছিয়ে নিতে বলছি। বুধবার প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত আমাদের সদস্যদের জানিয়ে দেব, আমরা বন্ধে যাচ্ছি না অর্ধেক করে ফ্যাক্টরি চালাচ্ছি। ফ্যাক্টরিগুলোকে আমরা বলব না, কেউ যদি তার ফ্যাক্টরিতে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে পারে সে ফ্যাক্টরি চালু রাখতে পারবে।’

এ সময় তিনি নিটওয়্যার খাতের দুরাবস্থার চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমাদের মালামাল সম্পূর্ণই রপ্তানিযোগ্য। ইউরোপই আমাদের প্রধান বাজার। নতুন বাজার গড়ে তুলেছিলাম। আমাদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ করে দেব কিন্তু কথা একটাই থাকছে বেতন কোথা থেকে দেব? মার্চ মাসের বেতনটা আমাদের সংগ্রহ করতেই হবে। আমাদের পার্টনার হচ্ছে ব্যাংক। ব্যাংক যদি বুঝতে পারে, আমরা বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাংকও বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা আমাদের সদস্যদের বলেছি এখন যেন বাড়তি উৎপাদন না করে।’

এদিকে মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল ১০ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। তবে এ ছুটির আওতার বাইরে থাকবে তৈরি পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তৈরি পোশাক শিল্পের আওতায় পড়বে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, আমাদের এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পে যারা যারা কাজ করে তারা কিন্তু ফ্যাক্টরি এবং তার জায়গায় থাকে। যেখানে আমরা খুব ক্লোজ মনিটরিংয়ে রেখেছি। আল্লাহ না করুক কোনো একটি ফ্যাক্টরিতে কেউ যদি আক্রান্ত হয়েই যায় তাহলে সে কিন্তু ওই ফ্যাক্টরির বাইরে যাচ্ছে না। কিন্তু ছুটিতে চলে গেলে ছড়ানোর আশঙ্কা আছে। সেই হিসেবে আগাগোড়া কিন্তু তারা (শ্রমিকরা) মনিটরিংয়ে আছে।’

এখন গার্মেন্টস খোলা রাখা প্রয়োজন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, ‘আরও প্রয়োজন হচ্ছে গার্মেন্টসকে আমরা ব্যবহার করছি। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর (পিপিই) তৈরি করার জন্য, মাস্ক তৈরি করার জন্য গার্মেন্টসের লোকজন আমাদের সাহায্য করছে। গতকালও চট্টগ্রাম থেকে ১০ হাজার নিয়েছি। আরও ৯০ হাজার পাচ্ছি। এ রকম বিভিন্ন এলাকা থেকে নেয়া হচ্ছে।’

শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান সম্প্রতি তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। যেখান বিজিএমইএর সভাপতিসহ এ সেক্টরের শীর্ষ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। পরদিন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সব পক্ষের মতামত শুনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরব। সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here