খবর৭১ঃ
দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে পুলিশ ইন্সপেক্টরদের (পরিদর্শক) পদোন্নতি। সারাদেশে এএসপি পদে পাঁচ শতাধিক পদ শূন্য রয়েছে। কিন্তু ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক নিরস্ত্র) থেকে পদোন্নতি না হওয়ায় ঐ পদে যুক্ত হতে পারছেন না দায়িত্বরত শতাধিক কর্মকর্তা। বর্তমানে এএসপি পদ বঞ্চিত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ইন্সপেক্টর। যার মধ্যে অনেকেরই চাকরির মেয়াদ শেষ প্রান্তে।
সূত্র মতে, পদোন্নতি আটকে থাকা ইন্সপেক্টরের সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি। অনেকে অবসরে চলে গেছেন। আবার কেউ কেউ মারা গেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসেও দীর্ঘদিন জিইয়ে থাকা পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। পদোন্নতি বঞ্চিত কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত প্রশ্ন-উত্তর পর্বে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বর্তমানে এএসপি পদ খালি রয়েছে ৫১৩টি। এরই মধ্যে ঐসব পদে নিয়োগও দেওয়া হয়েছে। আবার কেউ চলে গেছেন অবসরে। কোটা অনুযায়ী বিভাগীয় পদোন্নতি পেয়ে ইন্সপেক্টরদের এএসপি হওয়ার কথা থাকলেও তাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কোটা অনুযায়ী এক-তৃতীয়াংশ এএসপি পদ পাওয়ার কথা নিরস্ত্র পরিদর্শকদের। প্রতি বছরই বিসিএস থেকে এএসপি পদে নিয়োগও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পদোন্নতি হচ্ছে না শুধু চাকরিরত ইন্সপেক্টরদের। নব্বইয়ের দশকে বিসিএস থেকে চাকরি নিয়ে অনেকে ছয় ধাপ পদোন্নতি পেয়েছেন। ৯৪ সালে কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক হয়ে তিন দফা পদোন্নতি পেয়েছেন। মাত্র ১০ থেকে ১২ বছর আগে বিসিএস ক্যাডারে যোগদান করে তিন দফা পদোন্নতিরও নজির রয়েছে। ৯০ সালে এসআই পদে পুলিশে যুক্ত হলেও একধাপ এগিয়ে এখন অবসরের পথে অনেকে। বর্তমানে এ ধরনের সাড়ে ৩ হাজার ইন্সপেক্টর রয়েছেন, যাদের পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় পদোন্নতি পেয়ে এএসপি হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা না হওয়ায় পরিদর্শকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন করা ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার ওসি, ইন্সপেক্টরসহ (তদন্ত) পুলিশের বিভিন্ন সংস্থায় দায়িত্বরত ইন্সপেক্টরদের দৈনন্দিন কাজেও এর ছাপ পড়ছে।
পদোন্নতি আটকে থাকা ইন্সপেক্টররা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী ১০ থেকে ১২ বছর ধরে ইন্সপেক্টর পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। কর্মক্ষেত্রে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য তাদের অনেকেই রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) ও বাংলাদেশ পুলিশ পদকসহ (বিপিএম) বিভিন্ন ধরনের পদক পেয়েছেন। মন্ত্রণালয় আর সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ে (পিএসসি) চিঠি চালাচালির মধ্যে আটকে রয়েছে তাদের পদোন্নতি।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালে এএসপি পদে পদোন্নতির জন্য তালিকাভুক্ত হন ২৭ জন। সময়মতো জ্যেষ্ঠ ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতি না হওয়ায় তখন তাদের পদোন্নতি প্রস্তাবটি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে যায়নি। বিভাগীয় এএসপি পদ শূন্য হলে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে পুলিশ সদর দপ্তর তাদের বার্ষিক গোপন প্রতিবেদন (এসিআর) সংগ্রহ করে। এর পর ৪৪টি শূন্য পদ পূরণের জন্য ২৭ জনের নাম ঐ বছরের ১৪ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালির পর একই বছরের ডিসেম্বরে ২৭ জনের পদোন্নতির প্রস্তাব যায় পিএসসিতে। ২০১৬ সালে ৮৬ জনকে পদোন্নতি দেয়। আর ২০১৮ সালে দেওয়া হয় ৬০ জন ইন্সপেক্টরকে। যা কোটার তুলনায় অপ্রতুল।
গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির তালিকা হচ্ছে। আইজিপি পদোন্নতি বঞ্চিত ঐ কর্মকর্তাদের আশ্বাস দিয়েছেন তাদের পদোন্নতি দিয়ে যাবেন।