ঝুঁকিতে থাকা ৩০ ব্যাংককে চিঠি, উচ্চ খেলাপি ঋণে উদ্বেগ বাংলাদেশ ব্যাংকের

0
456
ঝুঁকিতে থাকা ৩০ ব্যাংককে চিঠি, উচ্চ খেলাপি ঋণে উদ্বেগ বাংলাদেশ ব্যাংকের

খবর৭১ঃ কয়েকটি ব্যাংকের উচ্চ খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া যেসব ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে সেসব ব্যাংককেও সতর্ক করা হয়েছে।

গত সপ্তাহের শেষের দিকে এ ধরনের ৩০টি ব্যাংককে চিঠি দিয়ে এর কারণ জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উচ্চ খেলাপির কারণ, আদায় পরিস্থিতি ও পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে।

ওই চিঠির ভাষ্য অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের হার ১০ থেকে ৯৮ শতাংশ- এমন ১৫টি ব্যাংককে কড়া বার্তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া খেলাপি ঋণের হার ৫ শতাংশের উপরে তবে ১০ শতাংশের বেশি নয় এমন ১৩টি ব্যাংক এবং সামগ্রিক দুর্বলতা বিবেচনায় আরও দুটি ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, যেসব ব্যাংকের খেলাপি ১০ শতাংশের বেশি তাদের উদ্বেগজনক তালিকায় রাখা হয়। মনিটরিং করা হয় নিয়মিত। এছাড়া খেলাপির হার ৫ শতাংশ ছাড়ালেই নজরদারি বাড়ানো হয়। এরই অংশ হিসেবে ৩০টি ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। খেলাপি রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিঠির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছে, এটা ইতিবাচক। তবে শুধু উদ্বেগ নয়, কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

১০ শতাংশের উপরে খেলাপিকৃত ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে বেসিক ব্যাংক। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৫২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এছাড়া আছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের ৫০ দশমিক ১১ শতাংশ, জনতা ব্যাংকের ২৯ দশমিক ২৯ শতাংশ, সোনালী ব্যাংকের ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ, রূপালী ব্যাংকের ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং অগ্রণী ব্যাংকের ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

একটি ব্যাংকের এমডি যুগান্তরকে বলেন, হ্যাঁ এ ধরনের চিঠি এসেছে। তবে খেলাপি তো হঠাৎ কমানো যাবে না। ধীরে ধীরে কমাতে হবে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১০ শতাংশ খেলাপির ওপরে রয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ৮৪ দশমিক ০৯ শতাংশ, পদ্মা ব্যাংকের ৭২ দশমিক ২৯ শতাংশ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৪৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ, এবি ব্যাংকের ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।

এছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ১৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ১৭ দশমিক ১৬ শতাংশ।

বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে উদ্বেগজনক অবস্থা বা ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। পুরো খাতের শীর্ষে থাকা এ ব্যাংকটির খেলাপি ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং হাবিব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ দশমিক ৮ শতাংশ।

৫ শতাংশের ওপরে খেলাপিকৃত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেসরকারি খাতের ওয়ান ব্যাংকের ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ, মেঘনা ব্যাংকের ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ, উত্তরা ব্যাংকের ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ, দ্য সিটি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংকের ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ট্রাস্ট ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৫ দশমিক ২১ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্বেগ প্রকাশ যথেষ্ট নয়, নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ। প্রয়োজনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে খেলাপি ঋণ আদায় করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে।

মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১৬ হাজর ২৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে ২২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমানো হয়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ৪২০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণখেলাপিদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। খেলাপি আইন শিথিল, অবলোপন নীতিমালায় ছাড়, গণছাড়ের আওতায় পুনঃতফসিলসহ নানা সুবিধা। এসব ছাড় গ্রহণ করে অর্ধলাখ কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এরপরও বছর শেষে খেলাপির পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করা ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ২৪ শতাংশ বা ৪৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে।

আগের বছর ১ লাখ ৬২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল ৪৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। গত বছর শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৪৪ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণকৃত ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা ঋণের ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

আগের বছর খেলাপি ঋণ ছিল ৩৮ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। অনেক বছর ধরেই খাতওয়ারি হিসেবে সরকারি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ বেশি ছিল। কিন্তু গতবছর বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে।

বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত তিন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ৫৯ কোটি টাকা; আগের বছর যা ছিল ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here