খবর৭১ঃ রাজধানীর ওয়ারীতে সামিয়া আফরিন ওরফে সায়মাকে (৭) ধর্ষণের পর হত্যার মামলায় একমাত্র আসামি হারুন অর রশিদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক কাজী আব্দুল হান্নান এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আগে আসামি হারুন অর রশিদকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সামিয়ার মা সানজিদা আক্তার ও বাবা আবদুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ে তাঁরা সন্তুষ্ট। রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান তাঁরা।
আদালত সূত্র ও মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত বছরের ৫ জুলাই সন্ধ্যার দিকে সামিয়া নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর নির্মাণাধীন ভবনের অষ্টম তলার একটি কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার বাবা আবদুস সালাম বাদী হয়ে ওয়ারী থানায় মামলা করেন। মামলা তদন্ত করে গত বছরের ৫ নভেম্বর আসামি হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে গত ২ জানুয়ারি হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলার ১৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জনের সাক্ষ্য নিয়ে আদালত আজ রায় ঘোষণা করেন।
মামলার নথিপত্র বলছে, শিশু সামিয়াকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগে পুলিশ কুমিল্লার ডাবরডাঙা এলাকা থেকে গত বছরের ৭ জুলাই হারুনকে গ্রেপ্তার করে। সামিয়াকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন আসামি হারুন। নিহত সামিয়া সিলভারডেল স্কুলের ছাত্রী ছিল। তার বাবা আবদুস সালাম নবাবপুরে ব্যবসা করেন।
সামিয়াদের পরিবারের বাস যে ভবনে, আসামি হারুন সেটির আটতলার বাসিন্দা পারভেজের খালাতো ভাই। তাঁর বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। এক মাস ধরে হারুন আটতলার ওই ফ্ল্যাটেই ছিলেন। পারভেজের রঙের দোকানে কাজ করতেন হারুন।
জবানবন্দিতে আসামি হারুন বলেন, ওয়ারীতে খালাতো ভাই পারভেজের বাসায় থাকতেন তিনি। পারভেজের রঙের দোকানে চাকরি করতেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় পারভেজের এক বছর বয়সী ছেলের ওষুধ নিয়ে আসেন তিনি। এরপর বাসা থেকে বের হওয়ার পর পারভেজের অষ্টম তলার ফ্ল্যাটের সামনে সামিয়াকে দেখতে পান। সামিয়া পারভেজের বাসায় আগেও এসেছে। পারভেজের ছেলের সঙ্গে সামিয়া খেলাধুলা করত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. আরজুন আদালতকে এক প্রতিবেদন দিয়ে জানান, সামিয়া হারুনকে বলে, ‘চাচ্চু, আমাকে ছাদটা দেখাইয়া নিয়ে আসেন।’ তখন হারুন সামিয়াকে নিয়ে ছাদে ওঠেন। একপর্যায়ে সামিয়াকে নয়তলার ফাঁকা কক্ষে নিয়ে যান হারুন। সেখানে হারুন ধর্ষণের চেষ্টা করলে সামিয়া চিৎকার করে। তখন তার গলাটিপে ধরে অচেতন করে ফেলেন। সেখান থেকে সামিয়াকে নিজের কক্ষে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন হারুন। পরে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করেন। এতে সামিয়া নিশ্চুপ হয়ে গেলে ওই কক্ষে থাকা রশি দিয়ে সামিয়াকে শ্বাসরোধ করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
জবানবন্দিতে হারুন বলেন, সামিয়াকে হত্যা করার পর লাশ রেখে খালাতো ভাই পারভেজের বাসায় যান তিনি। পরে গোসল সেরে বাসার নিচে গিয়ে এলাকায় ঘোরাঘুরি করেন। রাত ১১টা দিকে নিজের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় চলে যান। বাড়ি যাওয়ার পর মোবাইলের সিম ফেলে দেন। সামিয়াকে ধর্ষণ করে হত্যা করার কথা সেই রাতে তাঁর বাবা-মাকে বলেন। পরে তিনি তাঁর ফুফুর বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন।