বেসিক ব্যাংকের ২১শ’ চাকরিজীবীর বেতন হ্রাস: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পুনর্বিবেচনার নির্দেশ

0
466
বেসিক ব্যাংকের ২১শ’ চাকরিজীবীর বেতন হ্রাস: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পুনর্বিবেচনার নির্দেশ

খবর৭১ঃ বেসিক ব্যাংকের প্রায় ২১শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা না কমানোর বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রীকে। এতে বলা হয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পাওয়া আইন ও নৈতিক অধিকার।

বিষয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করতে বলা হয়। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বেসিক ব্যাংকের বেতন-ভাতার বিষয়টি নতুন করে দেখতে শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

বেতন কমানো প্রসঙ্গে এর আগে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বেসিক ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্য ব্যাংকগুলোর তুলনায় অনেক বেশি বেতন নেন। ব্যাংকটি লোকসানেও আছে। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। তাই বেসিক ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেতন কমানো হবে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ৩৫৪ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছেন। মাত্র ৭২টি শাখার জন্য প্রায় ২১শ’ জনবল আছে। এত লোকের এখানে কী কাজ বলে তিনি প্রশ্ন রাখেন।

জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আলম যুগান্তরকে বলেন, বেতন কমানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সুপারিশসংক্রান্ত কোনো তথ্য আমার জানা নেই। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সুপারিশ অর্থমন্ত্রীর কাছে এসেছে এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। তিনি আরও বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকেই বেসিক ব্যাংকের বেতন কাঠামো হ্রাস করা হয়েছে। এ নিয়ে আদালতে রিটও চলছে।

অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে ড. মসিউর রহমান বলেন, বিগত দিনে বেসিক ব্যাংকে আর্থিক সংকট থাকলেও তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রচেষ্টায় গত বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ ১২ হাজার ৮৭০ কোটি থেকে বেড়ে ১৩ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

ফলে এ সময়ে আমানত বেড়েছে ৮৭২ কোটি টাকা। একইভাবে ব্যাংকটিতে উল্লেখযোগ্য হারে খেলাপি ঋণের পরিমাণও হ্রাস পেয়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৫৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি কমেছে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্টার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমার পাশাপাশি আমানতের পরিমাণও বাড়ছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ব্যাংকটিকে ফের লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় ২২ ডিসেম্বর বেতন-ভাতা কমানোর নির্দেশনা জারি করেছে পরিচালনা পর্ষদ, যা কার্যকর হলে বেতন-ভাতা প্রায় ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাবে।

বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বোনাস দেয়া বন্ধ করা হয়েছে। একইভাবে বেতন-ভাতা কমানোর সিদ্ধান্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃঢ় মনোবল ও উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত করবে, যা পরে ব্যাংকের চাকরিজীবীরা কার্যক্রম পরিচালনায় নিরুৎসাহিত হবেন।

২২ ডিসেম্বর বেসিক ব্যাংকের সব কর্মকর্তার বেতন-ভাতা কমানোর নির্দেশ প্রদান করে পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জারি করে সব শাখার প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়। বেসিক ব্যাংকের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ডিসেম্বরে ঘোষণা দেয়ার পর ফেব্রুয়ারিতে বেতন-ভাতা কমানো হয়েছে। সর্বনিু ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন হ্রাস করা হয়েছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।

জানা গেছে, বেতন-ভাতা না কমানোর জন্য বেসিক ব্যাংকের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে আবেদন করেন।

ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে বেশ কিছু অনিয়ম হয়েছে। এতে ব্যাংকের আর্থিক সূচকের অবনতি হয়। ফলে ব্যাংকটি প্রথম ক্ষতির মুখোমুখি হয়। তবে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে বেসিক ব্যাংক ২০১৬ সালে ৯ কোটি ও ২০১৭ সালে ৩৫ কোটি টাকা পরিচালনা মুনাফা অর্জন করে।

জন্মলগ্ন থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকারকে বেসিক ব্যাংক ৮২৩ কোটি টাকা কর্পোরেট কর দিয়েছে। এছাড়া ২০১১ সাল পর্যন্ত এ ব্যাংক সরকারকে নগদ ডিভিডেন্ট ৫৪ কোটি টাকা এবং স্টক ডিভিডেন্ট ২৮৭ কোটি টাকা দিয়েছে। বিধি মোতাবেক ৫০ শতাংশ ঋণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিতরণ করা হয়। যা সামষ্টিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা কমানো হলে সবার মনোবল ভেঙে যাবে এবং ব্যাংকের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২১শ’ পরিবার পথে বসার উপক্রম হবে। তাই শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকার ২০২০ সালকে মুজিববর্ষ ঘোষণা দিয়েছে।

আর ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন সরকারি ও বেসিরকারি প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে। সেখানে বেসিক ব্যাংকের বেতন-ভাতা কমানোর বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অমানবিক।

সেখানে আরও বলা হয়, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের নিয়মিত আমানত সংগ্রহ, ঋণ প্রদান, শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়, ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ, যথাযথ নিয়োগ ও ঋণ অবলোপনসহ ব্যাংকের আয় বাড়ানোর কার্যক্রমের ওপর মনোযোগ দিচ্ছে না। অন্যদিকে ব্যাংকের বেতন-ভাতা কমিয়ে লোকসান কমানোর চেষ্টা করছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here