খবর৭১ঃ ব্যাংকিং খাতে উন্নয়ন হচ্ছে, তবে লুটপাটও হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধিসহ আর্থসমাজিক খাতে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম আমাদের জন্য একটি কালো দিক। এছাড়া এ খাতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, উন্নয়ন হচ্ছে তবে লুটপাটও হচ্ছে।
শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংক কমিশন গঠন নিয়ে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রিয়াজুর রহমান চৌধুরী ও অ্যাকাউন্টিং অ্যালামনাইয়ের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ব্যাংকিং খাতের কারসাজির কারণে দেশে আয়ের বৈষম্য বাড়ছে। এক্ষেত্রে ব্যাংক কমিশন গঠন একটি ভালো পদক্ষেপ হতে পারে। যদিও এ বিষয়ে সরকারে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে মতের মতদ্বৌততা রয়েছে। তবে আর্থিক খাতের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য আস্থা, দায়বদ্ধতা ও বিশ্বস্থতা খুবই প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকার আপসহীন। তবে সরকার ইচ্ছা করলেই প্রক্রিয়াগত কারণে দ্রুতগতিতে খেলাপি ঋণ আদায় করতে পারবে না। ব্যাংকিং খাতের আত্মসাৎকৃত অর্থ আদায়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার কথা বলা হলেও এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। তবে প্রচলিত আইনে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত অর্থ আদায়ের চিন্তা-ভাবনা সরকারের আছে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরে আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠন করতে পারাটা হবে সরকারের জন্য একটা সাহসী পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, গত এক দশকে অর্থনীতিতে সরকারের অনেক সফলতা থাকলেও ব্যার্থতার তালিকাটাও ছোট নয়। বিশেষ করে একের পর এক ঋণ কেলেঙ্কারি, অর্থ আত্মসাৎ, রিজার্ভ চুরি, বেসিক ব্যাংকের জালিয়াতি, ফারমার্স ব্যাংকের পতন, পিপলস লিজিংয়ের অবসায়ন, খেলাপি ঋণের আকার বৃদ্ধি, পুঁজি বাজারের কারসাজি, শেয়ার মার্কেট লুট, চিহ্নিত ঋণখেলাপীদের বারবার সুযোগ প্রদান ইত্যাদি কলঙ্কিত ঘটনা আর্থিক খাতকে ব্যাপক দুর্বল করে ফেলেছে। তাই স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠন করে আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছাই পারে আর্থিক খাতে লুটতরাজের এই সংস্কৃতি বন্ধ করতে। এর জন্য প্রয়োজন জবাবদিহীতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা। যাতে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত হয়ে ব্যাংকাররা ঋণ প্রদানে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, হলমার্ক, ডেসটিনি, বিসমিল্লাহ গ্রুপসহ নামে বেনামে বহু প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের অর্থ লুট করে কীভাবে দেশে বিদেশে অবৈধ অর্থের পাহাড় গড়েছে তা এখন আর কারো অজানা নাই। সর্বশেষ আমরা দেখেছি চারটি প্রতিষ্ঠান দখলের মাধ্যমে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেল পি কে হালদার। অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদারের এই আর্থিক লুটপাটে সহযোগিতা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকেরই সাবেক এক ডেপুটি গভর্নর। ব্যাংকের অর্থ লুটকারী এরা প্রত্যেকেই দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে ভিন দেশের নাগরিকত্ব, সেকেন্ড হোম বা অন্যদেশের পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট গ্রহণ করে সে সব দেশে রাজকীয় জীবনযাপন করছে। গড়ে তুলছে রাজ প্রাসাদ। এছাড়া শুধু ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে ৯৮ হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে ৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগ প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।
গ্র্যান্ড ফাইনালে বিজয় নিশান দল কে পরাজিত করে উত্তাল মার্চ দল চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন, প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টেন্ট আবুল বশির খান, এফসিএমএ, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, নারী উদ্যোক্তা সানজিদা আক্তার খানম, উন্নয়ন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এস এম মোর্শেদ।
প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলকে যথাক্রমে নগদ ১ লাখ ও ৫০ হাজার টাকাসহ ক্রেস্ট, ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।