খবর৭১ঃ দেশে আরেক দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে গ্রাহকদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বর্ধিত দামে বিল পরিশোধ করতে গিয়ে এক বছরে সব মিলিয়ে ভোক্তাদের পকেট থেকে বেরিয়ে যাবে অতিরিক্ত ২ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। এ সময়কালে সরকারও মূল্য সমন্বয়ের জন্য ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে।
অভিযোগ উঠেছে, ভুল নীতি ও পরিকল্পনার কারণে অযৌক্তিক ব্যয়ের ভার বইছে বিদ্যুৎ খাত। উৎপাদন খরচবৃদ্ধির যুক্তি দেখিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ সেবাপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। অথচ সরকার গত অর্থবছরে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ গুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দিয়েছে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। কিন্তু এ কেন্দ গুলোর সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎও আসেনি জাতীয় গ্রিডে। এ বছর ক্যাপাসিটি চার্জের হার আরো বাড়ানো হয়েছে। এমন নানা অযৌক্তিক খরচের কারণে ভর্তুকি দিয়ে এবং দাম বাড়িয়ে বিদ্যুতের মূল্যহার সমন্বয় করতে হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা দাম বাড়িয়ে আদেশ জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সঙ্গে বাড়ানো হয় সঞ্চালন মূল্যহারও। খচুরা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট) বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৬ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রতি ইউনিটের গড় দাম ছয় টাকা ৭৭ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে সাত টাকা ১৩ পয়সা। বিইআরসির প্রাক্কলন এবং আদেশ বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগামী এক বছর ৭ হাজার ১৩৫ কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রি করা হবে। এ বিক্রি থেকে বিতরণকারী সংস্থা-কোম্পানিগুলোর রাজস্ব আয় হবে ৫০ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা।
বিইআরসি এবং বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে পল্লী বিদ্যুতের (আরইবি) গ্রাহকরা। গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী এ সংস্থার প্রতি ইউনিটে গড় বিদ্যুৎ বিল ছিল ছয় টাকা ২৬ পয়সা। এখন থেকে তা বেড়ে হয়েছে ছয় টাকা ৫৮ পয়সা। প্রতি ইউনিটে দাম বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ১১ শতাংশ। চলতি বছর আরইবি ৩ হাজার ৫৮১ কোটি ৯০ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করবে। আগের হারে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হলে সংস্থাটির গ্রাহকদের ব্যয় হতো ২২ হাজার ৪২২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। তবে মূল্যহারে ব্যয় দাঁড়াবে ২৩ হাজার ৫৬৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ শুধু আরইবি গ্রাহকদের বিদ্যুত্ বিল বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি হবে এক হাজার ১৪৬ কোটি ২১ লাখ টাকা।
ঢাকা (মহানগর ছাড়া) ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বর্ধিত দামে ১ হাজার ২৫১ কোটি ১০ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করবে। এতে সংস্থাটির আয় হবে ৯ হাজার ৪৬১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বর্ধিত দামের কারণে পিডিবির আয় বাড়বে ৫১৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। এ টাকা বাড়তি খরচ করবে গ্রাহক।
ঢাকা শহরের দক্ষিণ অঞ্চল এবং নারায়ণঞ্জের কিছু অংশে বছরে ৯৬৬ কোটি ৯০ লাখ ইউনিট বিদ্যুত্ ৭ হাজার ৮১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় বিক্রি করবে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। বর্ধিত মূল্যহারের কারণে এ কোম্পানি গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি ৪৩৫ কোটি ১০ লাখ টাকা পাবে। ঢাকা মহনগরের উত্তর অঞ্চল এবং গাজীপুরের কিছু অংশে বিদ্যুৎ বিতরণকারী ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ৫৭৪ কোটি ৯০ লাখ ইউনিট বিক্রি করবে। এ কোম্পানির বিদ্যুৎ কিনতে গ্রাহকের অতিরিক্ত খরচ হবে ২৫২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।