হবিগঞ্জে সাদপন্থীদের ইজতেমা বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচী ঘোষণা

0
427
হবিগঞ্জে সাদপন্থীদের ইজতেমা বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচী ঘোষণা
ছবিঃ মঈনুল হাসানা রতন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি।

খবর৭১ঃ

মঈনুল হাসানা রতন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জে মাওলানা সাদ পন্থীদের ইজতেমা বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারী হবিগঞ্জের প্রত্যেক উপজেলা বিক্ষোভ মিছিল ও ২৭ ফেব্রুয়ারী হবিগঞ্জ শহরের মুক্তিযোদ্ধা চত্তরে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।

গতকাল রোববার দুপুরে শহরের মার্কাজ মসজিদে সম্মিলিত উলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতা হবিগঞ্জ’র ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে আগামী ২৭, ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারী শহরের সুলতান মাহমুদপুর মাঠে মাওলানা সাদ পন্থীরা ইজতেমার আয়োজন করছে।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, প্রায় শতবর্ষী অরাজনৈতিক দ্বীনী সংগঠন দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে চলে আসছিলো। বিগত কয়েক বছর যাবত লক্ষ্য করা গেছে, বিশ্ব তাবলিগের একজন শুরা সদস্য ভারতের দিল্লীর নিজামুদ্দিন মারকাজের একজন মুরুব্বি মাওলানা সাদ হঠাৎ করে তাবলিগের উসুল ও নিয়ম ভঙ্গ করে কোন ধরণের পরামর্শ ছাড়াই নিজেকে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমীর ঘোষণা করেন। অথচ বিশ্বব্যাপী তাবলিগের এই মেহনতে পরামর্শ ছাড়া কোন কাজ আঞ্জাম দেয়া হয় না।

১৯২৪ সালে তাবলিগের ১ম আমীর হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহঃ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাবলিগ জামাতে একক আমীর পদ্ধতি চালু ছিল। উক্ত সময়ের মধ্যে ৩ জন আমীর এই জামাতকে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু কোন আমীরই নিয়মতান্ত্রিক পরামর্শ ছাড়া নির্বাচিত হননি। পরবর্তীতে বিশিষ্ট মুরুব্বিদের পরামর্শক্রমে ১৯৯৩ সালে ১০ সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক শুরা কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি বিশ্ব তাবলিগের কাজ পরামর্শ ভিত্তিক পরিচালনা করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। যার একজন সদস্য মাওঃ সাদ। মাওঃ সাদ ছাড়া বাকী সকল সদস্য ইন্তিকাল করলে হঠাৎ করে তিনি স্বেচ্ছাচারমুলক অনৈতিক ঘোষণার মাধ্যমে নিজেকে একক আমীর ঘোষনা দেন। ফলে অসন্তোষ ও ভাঙ্গণ দেখা দেয় তাবলিগে। যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে।সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা সাদের কোরআন হাদীস বিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরা হয়। মাওলানা সাদ মনে করেন “হেদায়েত আল্লাহর হাতে নেই, আল্লাহর উপর যার ভরসা নেই সে যেন আত্মহত্যা করে, মসজিদের বাইরে দ্বীনের দাওয়াত দেয়া সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ, মক্কা মদীনার পর সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান হল মারকাজ নিজামুদ্দিন”। এছাড়াও মাওলানা সাদ দীর্ঘদিন যাবত কোরআন সুন্নাহ বিরোধী মরাত্মক বিভ্রান্তিকর ও অপব্যাখ্যা দিয়ে আসছেন।

ফলশ্রুতিতে ২০১৮ সালে মাওলানা সাদ টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ গ্রহনের জন্য বাংলাদেশে আসলেও সাধারণ মুসলমানদের বাধার মুখে ইজতেমায় প্রবেশ করতে পারেনি। পরে তার বাংলাদেশে আসার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়।এক প্রশ্নের উত্তরে মাওলানা আব্দুল্লাহ আকিলপুরী বলেন, বাংলাদেশে তাবলিগ জামাত দুইভাগে বিভক্ত হয়ে কয়েক বছর যাবত টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উভয় গ্রুপের মুরুব্বিদের নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জেলায় জেলায় মাওলানা সাদ পন্থীরা ইজতেমা করতে পারবে না। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মাওলানা সাদ পন্থীরা হবিগঞ্জে ইজতেমার আয়োজন করছে। তাদের এই কার্যক্রম বন্ধ করতে আমরা হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের নিকট স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা আশা করি, এই ইজতেমা বন্ধ করতে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবে। তা না হলে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারী হবিগঞ্জের প্রত্যেক উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও ২৭ ফেব্রুয়ারী হবিগঞ্জ শহরের মুক্তিযোদ্ধা চত্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো আমরা।

সেই সাথে আমাদের দাবী হল- মাওলানা সাদ পন্থীদের যে কোন ধরণের গণজামায়েত, তাবলিগের নামে তাদের সব ধরনের অপতৎপরতা বন্ধ ও জেলার বিভিন্ন মসজিদে জোরপূর্বক তাদের জামাত প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বেফাক সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ আকিলপুরী, হবিগঞ্জ তাবলিগ জামাতের আহলে শুরার প্রফেসর সৈয়দ মহসিন আলী, চুনারুঘাট শামসূল উলুম টাইটেল মাদ্রাসার মুহতামীম মাওলানা জহুর আলী, হবিগঞ্জ ব্যকস সভাপতি সামছুল হুদা, যুব উলামা ঐক্য পরিষদ সভাপতি মাওলানা জাবের আল হুদা, মাওলানা মাসউদুর রহমান চৌধুরী বেলাল, শেখ সেবুল আহমেদ, হাফিজ আব্দুর রহমান, মাওলানা আব্দুল জলিল ইউসূফী, হাজী নুরুল হক ও মাওলানা নাজমুল হুদা প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here