খবর৭১ঃ অবশেষে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজের সুস্থ যাত্রীরা মুক্ত হয়েছেন। করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় ফল নেগেটিভ এসেছে এমন ৫০০ যাত্রী বুধবার জাহাজ ছাড়ার অনুমতি পেয়েছেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে জাহাজটিতে কোয়ারেন্টাইন (রোগ সংক্রমণের আশঙ্কায় পৃথক রাখা) করে রাখা হয় ৩ হাজার ৭০০ যাত্রীকে। জাহাজ থেকে হংকংয়ে নেমে যাওয়া এক যাত্রীর শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ার পর জাহাজটিকে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়। এরপর জাহাজে একের পর এক ব্যক্তি আক্রান্ত হতে থাকেন। চীনের বাইরে এই জাহাজে সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। যাত্রীরা জাহাজটিতে উঠেছিলেন প্রমোদ ভ্রমণ করতে। কিন্তু সেখানে শুধুই যেন বিষাদের ছায়া। জাহাজটিতে এখন কমপক্ষে ৫৪২ জন ভাইরাস আক্রান্ত রয়েছেন।
জানা গেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে জানালাবিহীন কেবিনে আটকে থাকতে থাকতে একঘেয়েমিতে ভুগেছেন অনেকে। জাহাজে ছয় বছরের ছেলেকে নিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন ইয়ার্ডলি অং নামে এক যাত্রী। পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসার পর তিনি আবেগ-আপ্লুত হয়ে টুইটারে লেখেন, ‘নেগেটিভ! আমি, ছেলে, স্বামী, মা এবং বাবা! ধন্যবাদ ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করার জন্য…এত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি এখন।’
যাদের কোনো লক্ষণ ছিল না এবং পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে, তাদের কর্মকর্তাদের তরফ থেকে একটি সনদ দেওয়া হচ্ছে। তবে সবাই ইয়ার্ডলির মতো ভাগ্যবান নয়। ব্রিটিশ যাত্রী ডেভিড আবেল এবং তার স্ত্রী স্যালির পজিটিভ এসেছে পরীক্ষার ফল। সবশেষ যাত্রী নেমে যাওয়ার পর ক্রুদের নতুন করে কোয়ারেন্টাইন শুরু হবে। এর আগে জাহাজের সুস্থ মার্কিন যাত্রীদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সোমবার জাপানের রাজধানী টোকিওর হানেদা বিমানবন্দর থেকে মার্কিন সরকারের দুটি বিমানে করে যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয়। জাহাজটিতে ৪০০ জন মার্কিন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ জন মার্কিন নাগরিক। তাদের জাপানেই চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে করোনা ভাইরাসে বেড়েই চলেছে মৃত্যু সংখ্যা। মঙ্গলবার চীনে আরো ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৪। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭৪৯ জন। এর ফলে চীনে মোট আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা হয়েছে ৭৪ হাজার ১৮৫ জন। আর সারা বিশ্বের করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ১০ জনের। প্রায় দুই মাস ধরে চীনের উহানের হাসপাতালগুলোয় জরুরি সেবা দিয়ে চলেছেন চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এড়ানো যাচ্ছে না মরণ ভাইরাসের কামড়।
করোনার থাবা থেকে বাঁচতে চুল কেটে ফেলতে হয়েছে চীনের নার্সদের। এতে দুটি উপকার হবে বলে মনে করেন তারা। প্রথমত, চুলের মাধ্যমে প্রাণঘাতী জীবাণুর সংক্রমণ এড়ানো যাবে। দ্বিতীয়ত, হাসপাতালে ঢোকার পর যে সুরক্ষাবর্ম তাদের পরতে হয়, তা বদল করাও অনেক সহজসাধ্য এবং কম সময়ের মধ্যে হবে। জরুরি সেবায় নিযুক্ত কর্মীরা এতই ব্যস্ত যে দিনে মাত্র একবার খাবার খাচ্ছেন।
সিঙ্গাপুরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক বাংলাদেশির অবস্থা ‘সংকটাপন্ন’ বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বুধবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান সকালে আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি জানান, সেখানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে একজনের অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল।’ ৩৯ বছর বয়সি ঐ ব্যক্তি অনেক দিন ধরেই শ্বাসকষ্ট এবং কিডনি জটিলতাসহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সিঙ্গাপুরে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে এ পর্যন্ত পাঁচ জনের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও তাদের কারও নাম প্রকাশ করেনি দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ১৩ দিন ধরে ঐ বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিক আইসিইউতে আছেন বলে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওষুধ আর কাজ না করায় চিকিত্সকরা শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন। তিনি (সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বললেন, ‘টপ মেডিক্যাল সার্ভিস (রোগীকে) দেওয়া হচ্ছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। তবে মঙ্গলবার থেকে ওষুধ রেসপন্স করছে না। এজন্য আপনাকে জানাতে চাচ্ছি। তবে আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি, যতটুকু করার আমরা করব’।
সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বললাম যদি উনার মৃত্যু হয়, তাহলে পরিবার তো লাশ চাইবে। তিনি জানালেন, সেই ব্যবস্থাও তার সরকার করবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত রোগীদের নাম সরকার জানে। তবে রোগীর ‘প্রাইভেসির’ স্বার্থে সিঙ্গাপুরে কর্তৃপক্ষ নাম প্রকাশ করতে চায় না। এর আগে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) কার্যকর সংস্কার নিয়ে দুই দিনের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।