নতুন করোনাভাইরাসঃ বিনা বাধায় সক্রিয় থেকে ৪ ডিগ্রি থেকে ৬৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি তাপামাত্রায়

0
441
বিনা বাধায় সক্রিয় থেকে ৪ ডিগ্রি থেকে ৬৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি তাপামাত্রায়
COVID-19। ছবিঃ সংগৃহীত

খবর৭১ঃ বাংলাদেশের মতো স্বাভাবিক তাপমাত্রার দেশে নতুন করোনাভাইরাস (COVID-19) বিনা বাধায় সক্রিয় থেকে রোগের বিস্তার করতে পারে। ৪ ডিগ্রি থেকে ৬৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি তাপামাত্রায় এটি সক্রিয় থাকে। অর্থাৎ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের দেশগুলোতে বা উষ্ণ তাপমাত্রার দেশগুলোতে এ ভাইরাসের সংক্রমন ঘটা খুবই স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এ ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশগত তাপমাত্রা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নয়।

কেউ চীন কিংবা সিঙ্গাপুর থেকে ফিরলেই তিনি করোনাভাইরাস আক্রান্ত, এমন ভাবা বা গুজব না ছড়াতে অনুরোধ জানিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো রোগী নেই।

চীনের হুবেই প্রদেশে অবস্থানরত ১৭১ বাংলাদেশিকে এখনই দেশে না ফেরানোর পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকায় কর্মরত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। রোগটিতে চীনে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ হাজার ৫৪৮ এবং মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৭৫ জনে।

সোমবার করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নানা তথ্য দেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর (পিএইচডি-পিএসও)। তিনি বলেন, গবেষণাসহ বিভিন্ন কাজে বিজ্ঞানীরা ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় করোনভাইরাস সংরক্ষণ করেন। যা পরে গবেষণার কাজে লাগানো হয়। ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ ভাইরাসের মৃত্যু হয়। তিনি আরো বলেন, ৬৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও এর শতভাগ মৃত্যু নিশ্চিত হয় না। তাই যারা বলেন যে, গ্রীষ্মকালে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটবে না, তাদের তথ্য সঠিক নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভাড ইউনিভার্সিটি থেকে ভাইরোলজি বিষয়ে পিএইচডি ও পোস্টডক করা এ গবেষক বলেন, ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার উপরের তাপমাত্রায় এ ধরনের ভাইরাসের কার্যকারিতা কমতে থাকে। তবে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় না। বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গরম সবচেয়ে বেশি। এ সময়েই ভাইরাসজনিত ইনফ্লুয়েঞ্জায় মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন। অর্থাৎ বাংলাদেশের সামগ্রিক তাপমাত্রা নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য উপযোগী সময়। তিনি বলেন, তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। চীনের বর্তমান সংক্রমণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতি একজন থেকে কোভিড-১৯ রোগটি চারজনের মধ্যে সংক্রমিত হচ্ছে। সেজন্যই রোগীদের আইসোলেশনে রাখা হয়। এতে ৫০ শতাংশ সংক্রমণ কমানো সম্ভব। এ ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন সর্বোত্তম পন্থা।

আইইডিসিআরের সংবাদ সম্মেলনঃ

কেউ চীন কিংবা সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আসা মানেই তিনি করোনাভাইরাস আক্রান্ত, এমন ভাবা ঠিক নয়। যারা আসছেন তারা বিভিন্ন স্থানে স্ক্রিনিং হয়ে আসছেন। অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে তারা ‘সেলফ কোয়ারেন্টাইনে’ থাকবেন। সব ধরনের নিয়ম মেনে চলবেন এবং জনসমাগম স্থলে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। তাদের জোর করে হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন নেই। সোমবার দুপুরে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআর ভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, বিদেশ থেকে ফিরেছে এমন সংবাদ পেয়ে অতি উৎসাহী হয়ে কাউকে বাড়ি থেকে ধরে আনার প্রয়োজন নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ ছাড়া কাউকে ধরে নেয়া, হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন নেই। এতে তারা অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

চীনের সব প্রদেশে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়নি। সুতরাং চীন থেকে এলেই যে তারা করোনা আক্রান্ত রোগী হবে এমন কোনো বিষয় নেই। এখন যেহেতু চীনের সঙ্গে সিঙ্গাপুর যুক্ত হয়েছে এবং সেখানে পাঁচ বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন, তাই সিঙ্গাপুর ফেরতদের নিয়েও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছি, কারও শরীরেই এ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে বলা যায়, বাংলাদেশে এখন কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী নেই। তাই গুজব ছড়ানো থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।

স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাঃ

সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রম ও সংক্রমণ মোকাবেলার প্রস্তুতি তুলে ধরা হয়। সংসদীয় কমিটির সদস্যবৃন্দ চলমান কার্যক্রম ও প্রস্তুতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন ও সব প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

ফের বেড়েছে নতুন রোগী, মৃত্যু ১৭৭৫ জনঃ

নতুন করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে চীনের হুবেই প্রদেশে নতুন রোগীর সংখ্যা ৩ দিন কমার পর ফের বাড়তে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৭৫ জনে। এ পরিস্থিতিতে ভাইরাসের বিস্তার কমাতে হুবেই প্রদেশে চলাফেরার ওপর নতুন কড়াকড়ি আরোপ করেছে চীন সরকার।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মূল ভূখণ্ডে রোববার আরও ২ হাজার ৪৮ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৫৪৮ জনে।

আর অন্তত ২৬টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়েছে। রোববার চীনে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হুবেই প্রদেশেই মারা গেছেন ১০০ জন। এতে চীনের মূল ভূখণ্ডে নতুন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৭০ জনে।

তাইওয়ানে রোববার প্রথম এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে। চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে এর আগে ফ্রান্স, হংকং, ফিলিপিন্স ও জাপানে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৭৭৫ জনে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৮৪৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

চীনের বাইরে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যে পাঁচশ’ ছাড়িয়েছে। তাদের বেশিরভাগই চীন থেকে সংক্রমিত হয়ে অন্য দেশে গেছেন।

চীন থেকে ১৭১ জনকে না ফেরানোর পরামর্শঃ

চীনের হুবেই প্রদেশে অবস্থানরত ১৭১ বাংলাদেশিকে এখনই দেশে না ফেরানোর পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকায় কর্মরত দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। ‘ঝুঁকি’ বিবেচনায় নিয়ে দেশের এবং জনগণের স্বার্থ চিন্তা করেই বাংলাদেশকে এমনটি ভাবার কথা বলেছেন তিনি।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিকাব আয়োজিত ‘ডিকাব টকে’ রাষ্ট্রদূত একথা বলেন। করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর ১ ফেব্রুয়ারি হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ৩১২ জন বাংলাদেশিকে বিশেষ একটি ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরত আনা হয়। রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ১৭১ জনকে এখনই ফেরত আনার প্রয়োজন নেই। তারা যেখানে আছেন, সেখানে সুরক্ষিতই আছেন। বর্তমানে হুবেই প্রদেশে ১৭১ বাংলাদেশি অবস্থান করছেন।

দেশের পথে ডায়মন্ড প্রিন্সেসের মার্কিন যাত্রীরাঃ

এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে জাপান সাগরে নোঙ্গর করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের মার্কিন যাত্রীদের দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। সোমবার সকালে দুটি বিশেষ উড়োজাহাজে তাদের নিয়ে টোকিওর হানেদা বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

তিন হাজার ৭০০ আরোহী নিয়ে ওই প্রমোদতরী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ইয়োকোহামা বন্দরে নোঙ্গর করে পর্যবেক্ষণে রয়েছে। হংকং থেকে উঠা এক চীনা যাত্রীর মাধ্যমে সেখানে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৩৫৫ যাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে জাপান সরকার জানিয়েছে।

ওই প্রমোদতরীতে ৪০০ মার্কিন যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের জাপানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাকি তিন শতাধিক যাত্রী দেশে ফিরছেন।

বরগুনায় চীন ফেরত এক শিক্ষার্থী হাসপাতালেঃ

বরগুনায় চীন ফেরত এক শিক্ষার্থীকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পটুয়াখালীর স্বাস্থ্য বিভাগের দুই কর্মকর্তা সোমবার রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেন। সোমবার দুপুর ২টায় সিভিল সার্জন অফিসে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান সিভিল সার্জন।

এ শিক্ষার্থী ১৫ ফেব্রুয়ারি চীন থেকে দেশে ফেরেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে বরগুনা পৌঁছালে তার শরীরে জ্বর অনুভূত হয়। এ সময় স্বজনরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসকরা জানান, এ শিক্ষার্থী চীন থেকে ৩৬ ঘণ্টা যাত্রা করে দেশে ফিরেছেন। এতে জ্বর হতে পারে। আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই।

হবিগঞ্জে চীন ফেরত শিক্ষার্থী তালাবদ্ধ

হবিগঞ্জে চীন ফেরত এক শিক্ষার্থীকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। দু’দফায় তিনি হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলেও পুলিশের মাধ্যমে তাকে খুঁজে আনা হয়। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, রায়হান চীনের জিয়াংসুতে একটি মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী।

৮ ফেব্রুয়ারি তিনি দেশে আসেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি জ্বর, কাশি ও ঘাড় ব্যথা অনুভব করলে পরিবারের সদস্যরা সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে তিনি বাড়ি চলে যান। ১৬ ফেব্রুয়ারি পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে তাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে এলে তিনি হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। পরে পুলিশের মাধ্যমে তাকে ধরে এনে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here