খবর৭১ঃ
বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, নতুন করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশে চলমান চীনা মেগা প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে চলমান চীনা প্রকল্পে প্রায় ৮ হাজার চীনা নাগরিক কাজ করছেন। আর সব মিলিয়ে মোট ১০ হাজার চীনা নাগরিক এখানে রয়েছেন। তাদের প্রায় ১০ শতাংশ চীনা নববর্ষের ছুটিতে দেশে গেছেন। তারা এখনই ফিরতে পারছেন না। এ কারণে এসব প্রকল্প শেষ হতে একটু দেরি হবে। এ সময় তিনি চীনে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ফেরত আনা, রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডিকাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টি ও সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান।
রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে চীনের বিকল্প হিসেবে অন্য দেশে ব্যবসা স্থানান্তর না করতেও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চীনা রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্য দেশে ব্যবসা স্থানান্তর হবে ব্যয়বহুল, অসম্ভব এবং অপ্রয়োজনীয়।
চীনের হুবেই প্রদেশ অবস্থানরত ১৭২ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে এখনই ফিরিয়ে না আনার পরামর্শ দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিনি বলেন, তাদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রামণের ঝুঁকি আছে। আমি চাই না বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ুক। বাংলাদেশের স্বার্থেই এটা উচিত হবে না। চীন থেকে জাপানে একজন নাগরিক ফিরে যাওয়ায় দেশটিতে ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। সেখান থেকে সবার শিক্ষা নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি কিছু কারিগরি সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশি বিমানগুলো তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে চীনে যেতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, কারণ এটা করলে তাদের অন্যান্য দেশে নিষিদ্ধ করা হবে। তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। করোনা ভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশ যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেটা খুবই ইতিবাচক। বাংলাদেশ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেই চীনা নাগরিকদের অন অ্যারাইভাল ভিসা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এটা খুবই ইতিবাচক।
এক প্রশ্নের জবাবে চীনা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমার থেকেই তৈরি হয়েছে, তাই এই সংকটের সমাধান তাদেরই করতে হবে। এই সংকট সমাধানে বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ গ্রুপ (জেডব্লিউজি) কাজ করছে। দুই দেশের মধ্যে আলোচনা করেই এ সংকটের সমাধান করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার বিরোধ অনেকটা স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার মতো। আর কোনো দম্পতি যদি তৃতীয় পক্ষের কাছে যান, তাহলে তাদের সমস্যার সমাধান হয় না।
মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উভয়ই চীনের ভালো বন্ধু উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, পশ্চিমাদের চাপের পরিবর্তে দুই দেশের মধ্যে আরো আলোচনা চায় চীন। মিয়ানমার বহু বছর ধরে পশ্চিমাদের চাপে ছিলো। তারা এখন আর এসব চাপ নিতে চায় না। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারই এখানে মূল ভূমিকা পালনকারী, চীন নয়। তবে এই সমস্যার সমাধানে চীন দুই দেশকেই সহায়তা করছে। এসময় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ত্রিপক্ষীয় পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে এ বিষয়ে দ্রুত অগ্রগতির আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। চীন মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ এবং বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন চায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। যদিও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) অন্তর্বর্তী আদেশ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।