খবর৭১ঃ
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। এ হার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণের এ প্রবণতা অর্থনীতিতে চরম ঝুঁকি তৈরি করছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম খেলাপি ঋণের হার নেপালে- ১ দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ওয়াশিংটন থেকে সম্প্রতি এটি প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে ২০১৯ সালের প্রাক্কলিত হিসাব ব্যবহার করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, খেলাপি ঋণের অনুপাত আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বা এর কাছাকাছি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া দেশগুলোর মধ্যে এশিয়ার কয়েকটি দেশ রয়েছে। মালয়েশিয়ায় ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ গ্রাহকরা দেশ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি পান না। থাইল্যান্ড সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (এএমসি) গঠন করে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে সফলতা পেয়েছে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে শ্রীলংকা রক্ষণশীল হয়ে উঠছে। ১৯৯৯ সালে দেশটিতে খেলাপি ঋণের হার ছিল মোট ঋণের ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০১৯ সাল শেষে ৩ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসে।
খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। দেশটিতে খেলাপিদের ওপর উড়োজাহাজ ও উচ্চগতির ট্রেনের টিকিট ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কর্পোরেট সংস্থার নির্বাহী কিংবা প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করতে পারেন না খেলাপিরা। এমনকি খেলাপিরা ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কোনো হোটেল সুবিধা নিতে পারেন না, রিয়েল এস্টেট কিনতে পারেন না।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় খেলাপি ঋণের হারে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভুটান। দেশটিতে এ হার ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। ১০ দশমিক ৮ শতাংশ নিয়ে আফগানিস্তান তৃতীয়। চতুর্থ স্থানে আছে ভারত। দেশটির খেলাপি ঋণের হার ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। ৯ দশমিক ৩ শতাংশ নিয়ে মালদ্বীপ পঞ্চম। পাকিস্তানে এ হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ। দেশটির অবস্থান ষষ্ঠ। শ্রীলংকা সপ্তম। দেশটিতে খেলাপি ঋণের হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, যৌক্তিকতা না দেখিয়ে ঋণ দেয়া হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ বাড়ছে। আর সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ বাড়ছে। সরকার কঠোর হলে খেলাপি ঋণ দ্রুত কমে আসবে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের অনুপাত মোট বিতরণ করা ঋণের ২ শতাংশের মধ্যে রাখতে হয়, যা বাংলাদেশ কখনোই অর্জন করতে পারেনি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখেছে শুধু নেপাল। দেশটির খেলাপি ঋণ মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। আইন ও নীতির কঠোর বাস্তবায়ন করে দ্রুত খেলাপি ঋণ কমিয়েছে শ্রীলংকাও।
বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বাড়লেও চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরসহ পরবর্তী অর্থবছরেও মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের ওপরেই থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে রাজস্ব কাঠামোর সংস্কারে তেমন অগ্রগতি না থাকায় শ্রীলংকার মতো বাংলাদেশেও রাজস্ব ঘাটতি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।