খবর৭১ঃ আসন্ন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ জয় পেতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় নির্বাচন কমিশনে (ইসি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপির প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ সব কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, বিগত দিনে যে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি আজ পর্যন্ত যে ভায়োলেশন হয়েছে, আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে যেগুলো ছোটখাটো লঙ্ঘন নয়, মেজর যে লঙ্ঘন হয়েছে বার বার বলেছি সমাধান হয়নি। শুধু সমাধান হয়নি তা নয়, আরো বেশি লঙ্ঘন হয়েছে। সোহরাওয়ার্দিতে আওয়ামী লীগের জনসভা হচ্ছে। এটা নির্বাচন বিধির সরাসরি লঙ্ঘন। নির্বাচনের দুইদিন আগে এটা করা যায় না। নির্বাচন কমিশন বলছে তারা কিছু জানেন না, আমরা মনে করি- তারা ওয়াচডগ হিসাবে সব পর্যবেক্ষণ করেন কিন্তু সমাবেশ করছে এটা তারা জানেনই না, এটা আমাদের তাদের কাছে বলতে হয়। সমাবেশে দক্ষিণের প্রার্থীর ব্যানার পোস্টার সিম্বল নিয়ে লোকজন যাচ্ছে। এটা ক্লিয়ারলি ভায়োলেশন।
তিনি বলেন, ফুটপাতের উপর আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ক্যাম্পের বিষয়ে আমরা বলেছিলাম। তারা বলেছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভাঙা হবে। এখন পর্যন্ত কোন অফিস ভেঙেছে বলে আমার জানা নেই। সবগুলো অফিসই এখনও আছে, রিটার্নিং অফিসার দুঃখ প্রকাশ করেছেন তারা এক্সিকিউট করতে পারছেন না। তাদের প্রার্থীর পোস্টারের মাপের ক্ষেত্রেও নিয়ম মানা হয়নি, সেগুলোও নামানোর কথা কিন্তু তা হয়নি। কোন পরিবর্তন হয়নি।
বিএনপির এই বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত দৃশ্যমান অপরাধ না হলে গ্রেফতার হবে না বলে জানিয়েছিল, কিন্তু গ্রেফতার চলছে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করা হবে না বলেছিল, কিন্তু সেটিও শুরু হয়ে গেছে। গ্রেফতারও হচ্ছে নতুনভাবে। আমাদের প্রার্থীদের উপর হামলার বিষয়ে তারা নাকি কিছু পায়নি। নির্বাচনের যে পরিবেশের কথা বলে আসছি, আওয়ামী লীগের দক্ষিণের প্রার্থীর একজন এমপি, সিনিয়র নেতা সেখানে বসে ছিলেন; এটা ক্লিয়ারলি ভায়োলেশন। ঢাবিতে বসে একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন- কেন্দ্রের ভিতরে বাইরে আশেপাশে দখলের জন্য। আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি নাকি বলেছেন- বিএনপি নাকি বাইরে থেকে লোক এনে কেন্দ্রে দখল করবে, দেশের একটি মানুষও কি তা বিশ্বাস করবে, উনি নিজে কি বিশ্বাস করবে।
এটি বলার পেছনে কারণ রয়েছে। ২০১৪ নিজেরা একটা নির্বাচন করেছে, তখনও নিজেরাই কেন্দ্র দখল করেছে। ২০১৮-তেও তারা কেন্দ্রে দখল করেছে, বিভিন্ন মেয়র নির্বাচনে এবং চট্টগ্রাম উপনির্বাচনের দখলও জাতি দেখেছে। এগুলো তারা প্রতিনিয়ত করছে, তাই তাদের মনে এটি কাজ করে, তিনি শুধু আওয়ামী লীগের জায়গায় বিএনপি বলে ফেলেছে। বাংলাদেশের কোন মানুষ কি তা বিশ্বাস করবে। বিএনপি কর্মীদের বাসায় গিয়ে হয়রানি গ্রেফতার হচ্ছে।
ভোটের পরিস্থিতি ইসির নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসি সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের নাগরিকের ভোট নিশ্চিত ও সুরক্ষার জন্য। কিন্তু এখন ইসি হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের ভোট সুরক্ষা জন্য। তাদের ভোট সুরক্ষার দায়িত্ব অনেকটা ইসির।
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগ) কনসার্ন আমরা বুঝতে পারছি। দেশীয় পর্যবেক্ষকদের ২২টার মধ্যে ১৮টির ওয়েবসাইট নেই। আবার দুইটির একই ব্যক্তি চেয়ারম্যান ও আরেকটিতে চিফ এক্সিকিউটিভ। সেই প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর আওয়ামী লীগ নেতাদের। আওয়ামী লীগের অবজারভারদের দিয়ে সবকিছু করতে চায়, বাইরের কেউ দেখবে তারা চায় না। নিয়ন্ত্রণের নির্বাচনের মাধ্যমে ফল পেতে চায়। অবজারভার, ইভিএম সেভাবেই করেছে। তবে কমিশনকে অসহায় বলতে পারব না, তাদের দায়িত্ব তাদের নিতে হবে বলে জানান তিনি।
বিজয়ী হওয়ার জন্য নির্বাচনে এসেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি শুধু জিতবে না বহু ভোটে জিতবে। তাই ভোট নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা হচ্ছে। সবাই মিলে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের পর্যায় নিয়ে গেছে। এখনও আশায় আছি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন কমিশন চাইলে পরিবর্তন সম্ভব। চাইলেই জনগণের ভোট ফিরিয়ে দিতে পারেন তারা।
গ্রেফতার বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের সঙ্গে কিছু সংস্থার লোক কাজ করছে। যারা জড়িত তাদের পক্ষ থেকে অনেক কিছু করানো হচ্ছে।
বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে থেকে সিইসি কে এম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহদাত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি ও যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল উপস্থিত ছিলেন।