৬ বছর পর মঞ্চে ফিরলেন সায়েম সামাদ

0
875
৬ বছর পর মঞ্চে ফিরলেন সায়েম সামাদ
সায়েম সামাদ

খবর৭১ঃ বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের অন্যতম নন্দিত অভিনয়শিল্পী সায়েম সামাদ। ১৯৯২ সাল থেকে নিয়মিতভাবে মঞ্চ, বেতার, টিভিনাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। বিজ্ঞাপনেও বাজিমাত করেছেন। মঞ্চের গুণী এই অভিনেতা মাঝের কিছুটা সময় মঞ্চ থেকে দূরে ছিলেন। এই সময় ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় হেড অব মার্কেটিংয়ে কর্মরত ছিলেন।

সম্প্রতি নতুন একটি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ৬ বৎসর পর আবার মঞ্চে ফিরছেন এই অভিনেতা। সায়েম সামাদ ঘোষণা দিয়েছেন এখন থেকে আবারও নিয়মিত অভিনয় করবেন।

বরেণ্য এই অভিনেতা জানিয়েছেন বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ‘গ্রহণকাল’ নামে একটি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ফের মঞ্চে ফিরছেন তিনি। নাটকটি মঞ্চে আনছে ঢাকা নান্দনিক রেপার্টরি। নাটকে বিশেষ একটি চরিত্রে অভিনয় করবেন সায়েম সামাদ। সৈয়দ মহিদুর রহমান রচিত ‘গ্রহণকাল’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন সৈয়দ শুভ্র।

৬ বছর পর মঞ্চে ফিরলেন সায়েম সামাদ

নতুন এই প্রযোজনায় সায়েম সামাদ ছাড়া আরও অভিনয় করবেন সৈয়দা নওশীন ইসলাম দিশা, সৈয়দ শুভ্র, শামসুজ্জামান দুলাল, সৈয়দ রমিত রহমান, মনোজিত কুমার ওঝা। নতুন নাটকের দর্শক প্রিয়তা নিয়ে অনেকটাই আশাবাদী সায়েম সামাদ। প্রতিভাবান অভিনেতা সায়েম সামাদ ১৯৯২ সাল থেকে নিয়মিতভাবে পদাতিক নাট্য সংসদের হয়ে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। এর আগের বছর ১৯৯১ সালে মুক্তধারা আবৃত্তি সংগঠনের প্রথম কাজের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করেন। এরপর ১৯৯২ সালে শিল্পকলায় প্রযোজনা কেন্দ্রীক কর্মশালায় অংশ নেন এবং ‘মেসমেকার’ নাটকে অভিনয় করেন। এ বছরই তিনি পদাতিক নাট্য সংসদে যোগ দেন। মঞ্চে তিনি ১৯৯৪ সালে ‘চক্কর’ নাটকে প্রথম অভিনয় করে। এরপর একে একে সায়েম সামাদ ‘বল্লবপুরের রূপকথা’, ‘মনষার পালা‘, ‘খেতমজুর খৈমুদ্দিন’, ‘মেশিন’, ‘সারি সারি লাশ’, ‘তারামন বিবি’, ‘ট্র্যাইবুনাল’,‘মাউসট্র্যাপ’, ‘বেদের মেয়ে’, ‘জনমাংক’ প্রভৃতি নাটকে অভিনয় করেছেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে অভিনয় ও নির্দেশনা দিয়ে অসংখ্য পুরুস্কৃত হয়েছেন।

পনেরোর অধিক নাটকে মঞ্চ আলোকিত করেছেন বহুমাত্রিক অভিনেতা সায়েম সামাদ। তার সর্বশেষ অভিনয় ছিল ‘জনমাংক’ নাটকে নিষ্ঠুর দেবতার চরিত্রে। থিয়েটার পাগল সায়েম সামাদ, বাঁধা-ধরা জীবনে বেশিদিন আবদ্ধ থাকতে পারেননি, মুক্ত বিহঙ্গের মতো তার চিরচেনা আবেগ আর ভালবাসার জায়গা-মঞ্চে আবার নিয়মিত হচ্ছেন সেটাই আনন্দের কথা। বাংলাদেশের স্বপ্রতিভ এই অভিনেতা আজীবন মঞ্চেই কাজ করতে চান। সায়েম সামাদ জানান ‘গ্রহণকাল’ নাটকে যুদ্ধাহত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহেদ চরিত্রে অভিনয় করবেন তিনি। যে শাহেদ তার দূরন্ত যৌবনে ভালবাসার মানুষকে পেছনে ফেলে চলে গিয়েছিল যুদ্ধের মাঠে। মহান নেতার বজ্রকণ্ঠের উদাত্ত আহ্বান তার স্বপ্নের আকাশটাকে এক ঝাঁক পায়রা হয়ে তাকে যুদ্ধের মাঠে ডেকেছিল। সে মিশে গিয়েছিল সেই পায়রার সঙ্গে। নেতার বজ্রকণ্ঠ ৭ কোটি বাঙালীর গায়ে যেন বাঘের তেজ এনে দিয়েছিল। তারা হায়েনার কণ্ঠনালী ছিড়ে ফুরে লাল-সবুজ পতাকাটি এই জমিনে ওড়াতে ঝাপিয়ে পড়েছিল।

৬ বছর পর মঞ্চে ফিরলেন সায়েম সামাদ

যুদ্ধের যবনিকাপাতের ঠিক পূর্বক্ষণে শাহেদ যুদ্ধাহত হয়ে একটি পা হারায়। দীর্ঘ চিকিৎসায় কেটে যায় বেশকটি বছর। অবশিষ্ট একটি পা নিয়ে যখন সে উঠে দাঁড়ায়, তখন সে চেয়ে দেখে পুরো দেশ যেন ন্যুব্জ-কুজ, অথর্ব্য হয়ে গেছে। ২৪টি বছর সংগ্রাম করে একটি মানুষ যে জাতির জন্য বয়ে এনেছিল বাঘের সাহস। সেই মানুষটিকে হায়নারা খুন করে পুরো জাতিকে যেন মুশিক শাবকে পরিণত করেছে। যেখানেই তাকায় সেখানেই যেন পশ্চাৎপদতার চিহ্ন। যে আদর্শের জন্য ৩০ লাখ প্রাণ অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিল বাঙালী, তা যেন কতিপয় কুলাঙ্গারের কালো থাবায় রাতারাতি উধাও হয়ে গেছে। সর্বত্রই ৭১ এর পরাজিত শত্রুর আস্ফালন। একটি পায়ের খ-িত জীবন নিয়ে শাহেদ আজ হাতরে বেড়ায় তার দৃপ্ত যৌবনের সেই হারানো দিনগুলোকে।

যে স্বপ্নভরা যৌবনে তার চোখে ভেসেছিল এক মানবিক দেশের ছবি, সেখানে আজ সাম্প্রদায়িক শক্তি ভর করেছে তার ভালবাসার প্রেয়সীর অরক্ষিত দেহে। যার জঠরে জন্ম নিচ্ছে যুদ্ধাপরাধীর সন্তান। নিদারুণ অপমানে ক্রুদ্ধ স্বদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বার বার প্রশ্ন রাখে- আমাদের জননীরা কি প্রতিনিয়ত ধর্ষিতা হয়ে দেশদ্রোহীর জন্ম দেবে? দেশপ্রেমিকরা কি নিঃশ্বেষ হয়ে গেছে চিরতরে। ৩২ নম্বরের সিঁড়ি বেয়ে একদা যে রক্ত নিঃশব্দে মিশে গেছে এই দেশের শরীরে, সে রক্ত গড়াতে গড়াতে পৌঁছে গেছে বঙ্গোপসাগরে। সে রক্তে আবার গর্জন তুলেছে সাগরের ঢেউয়ের বুকে।

সেই গর্জনে কেঁপে উঠছে ধর্ষিতা মাটি। সেই মাটির বুকে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর বুকে আবার জ্বলে উঠছে ৭১ এর চিতা। যে চিতার আগুনে তারা দেখতে পাচ্ছে তাদের পিতার নির্ভিক মুখের ছবি। যে মুখ রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে আবার হুঙ্কার দিচ্ছে জয়বাংলা। এ হুঙ্কার দাবায়ে রাখে এমন সাধ্য কার। এমন বক্তব্য নির্ভর নাটকে অভিনয় করতে পেরে অনেকটাই উচ্ছ্বসিত সায়েম সামাদ। তার জন্য শুভ কামনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here