খবর৭১ঃ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অবশ্যই মানতে হবে। তাদের এই রায় প্রত্যাখ্যান করার কোনো সুযোগ নেই। এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। সেখানে যতজন বিচারক ছিলেন তারা সর্বসম্মতভাবে এই রায় দিয়েছেন।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মাঝে বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ ও ক্যান্সার রোগীদের অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বলা হয়েছে মিয়ানমারকে ৪ মাস পর আদালতকে এই রায়ের কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে তার প্রতিবেদন পাঠাতে। এতদিন যারা মিয়ানমারকে এই কাজ থেকে নিবৃত্ত করার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত চাপ প্রয়োগ করেনি তারা রোহিঙ্গাদের যাতে পূর্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকার দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ফেরত নিয়ে যায় সে জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই রায়ের পর দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগ করবে। মিয়ানমারকে এই রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে ইউএনও মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ খলিলুর রহমান চৌধুরী, পৌরসভার মেয়র আলহাজ শাহজাহান সিকদার, উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার প্রমুখ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মিয়ানমারে যখন সেখানকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়েছে, যখন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, রোহিঙ্গাদের যখন নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছিল, তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমি যদি দেশের ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারি, তাহলে মিয়ানমারের ১০/১১ লাখ মানুষকেও খাওয়াতে পারব। সে কারণে তিনি আমাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছেন এবং তাদের বাংলাদেশে জায়গা করে দিয়েছেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, কিন্তু মিয়ানমার যেভাবে সেখানে মানুষ হত্যা করেছে, ছোট শিশুদের হত্যা করেছে, সন্তানের সামনে মাকে ধর্ষণ করেছে। নির্বিচারে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে, সেটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। সেই অপরাধের বিরুদ্ধে ওআইসির সব সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষে গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক আদালতে (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট অব জাস্টিসে) মামলা করেছে। সেই মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি ঐতিহাসিক রায় হয়েছে।
তিনি বলেন, সেই মামলায় আন্তর্জাতিক আদালত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে বলেছেন, মিয়ানমারকে অবিলম্বে মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধ করতে হবে। সেখানে যে আরও রোহিঙ্গা রয়েছে তাদের যাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া হয়। এ ছাড়া এর আগে যে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে সেগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীসহ অন্য যে সব বাহিনী অপরাধ সংগঠিত করেছে তারা যাতে আর কোনোভাবেই এ ধরনের কাজে যুক্ত না থাকে। তারা যাতে কোনোভাবে অন্য কাউকে আর প্ররোচণা না দেয় সে জন্য এই ঐতিহাসিক রায় দেয়া হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি হিসেবে প্রাথমিকে ১০১ জন শিক্ষার্থীকে ১২শ’ টাকা করে, ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ৯৪ জন শিক্ষার্থীকে ১৫শ’ টাকা করে, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ৯ জন শিক্ষার্থীকে ৩২শ’ টাকা এবং ডিগ্রি ও অনার্স পর্যায়ে ২ জন শিক্ষার্থীকে ৪ হাজার ৫শ’ টাকা করে হাতে তুলে দেন।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ২শ’ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ এবং ২টি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিকসামগ্রী এবং ৩০ জনকে বাইসাইকেল দেয়া হয়। এ ছাড়া ২১ জন ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোক, প্যারালাইসিস ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়।