কোনোভাবেই থামছে না পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং

0
575
কোনোভাবেই থামছে না পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং

খবর৭১ঃ
কোনোভাবেই থামছে না পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং। প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে অথচ বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতা করছে লোডশেডিংয়ের। এ যেন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, শিল্প-কারখানাগুলো পঙ্গু করে দিয়ে চক্রটি মূলত সরকারের বিরুদ্ধে মরণ খেলায় মেতেছে। তাদের ভাষ্য সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি দেশব্যাপী বিদ্যুতের সাব স্টেশনগুলোও আপগ্রেড করছে। প্রতিটি প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। কিন্তু এর সুফল ঘরে তুলেতে পারছে না বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলোর দুর্নীতি, লুটপাট আর ষড়যন্ত্রের কারণে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় পল্লী বিদ্যুতের বিভিন্ন সমিতিতে। এই অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।

জানা গেছে রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুতের ভেলকিবাজি কিছুটা কম থাকলেও ভয়াবহ অবস্থা গ্রামে-গঞ্জে। বিশেষ করে শিল্প-কারখানা ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন হিসেবে পরিচিত এলাকায় এই লোডশেডিং সবচেয়ে বেশি।

পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন এলাকায় গত বছর ৩১ দিনে ৩৩ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের খবর বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল। এই ঘটনায় তোলপাড় হলে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্তারা বলেছিলেন, এই পরিস্থিতি আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যাবে।

কিন্তু সরেজমিন ঘুরে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এখন লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। প্রতিদিনই গড়ে ২-৩ বার করে বিদ্যুৎ যাচ্ছে।

গত ডিসেম্বর মাসেও ১২ থেকে ১৪ বার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতে। সব মিলিয়ে এই মাসে ১২ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ ছিল না আরইবিতে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের এক শীর্ষ ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিদিন যদি ১ মিনিট করে বিদ্যুৎ যায় তবে একটি কারখানায় মাসে ৩০ ঘণ্টা কাজ বন্ধ থাকে। কারণে একবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটলে ওই কারখানা চালু করতে কমপক্ষে এক ঘণ্টা সময় লাগে। আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অপরিসীম।

খোদ আরইবির হবিগঞ্জ সমিতি সূত্রে জানা গেছে গত ডিসেম্বর মাসে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে ওই এলাকায়। তবে তারা দাবি করছেন এটা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অবহেলায় হয়নি।

এই ঘটনার জন্য পিজিসিবিই মূলত দায়ী। কারণ পিজিসিবি থেকে বিভিন্ন ফিডারে বিদ্যুৎ চালু করলেই আরইবির লাইন ট্রিপ করে। বিষয়টি পিজিসিবিকে জানিয়েও তারা কোনো ফল পাচ্ছেন না।

গত এক মাসে এই বিষয়টি সুরাহা করতে আরইবি থেকে ১০ বারের বেশি অভিযোগ জানানো হয়েছে পিজিসিবিকে। এ প্রসঙ্গে পিজিসিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা সুমন বলেন, তিনি বিষয়টি তাদের শীর্ষ ম্যানেজমেন্টকে জানাবেন।

সূত্র জানায়, ১ ডিসেম্বর পিজিসিবির অবহেলায় ৫ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট লোডশেডিং করতে হয়েছে আরইবিকে। ১৭ ডিসেম্বর একই ঘটনায় পর পর দুই দফায় আড়াই ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।

২০ ডিসেম্বর একই ঘটনায় দুই দফায় ১৫ মিনিট বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটেছে। ২৩ ডিসেম্বর পল্লী বিদ্যুতের কারণে দুই দফায় ১১ মিনিট বিদ্যুৎ ছিল না। ২৪ ডিসেম্বর লোডশেডিং হয়েছে ২০ মিনিট।

২৬ ডিসেম্বর দুই দফায় লোডশেডিং ছিল ১০ মিনিট। ২৯ ডিসেম্বর পিজিসিবির ফিডারের কারণে লোডশেডিং করতে হয়েছে ৫ মিনিট। ৩০ ডিসেম্বর লোডশেডিং হয়েছে দুই দফায় ২৬ মিনিট।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে আরইবি (পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড) ও পিজিসিবি (পাওয়ার গ্রিড অব বাংলাদেশ) সারা দেশে তামাশা শুরু করেছে। কোথাও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পারছে না এই দুই প্রতিষ্ঠান।

তাদের খামখেয়ালিপনায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে দেশের লাখ লাখ শিল্পকারখানা। কখনও আরইবি কখনও পিজিসিবির কারণে করতে হচ্ছে লোডশেডিং।

মোট কথা সরকারের এই দুই প্রতিষ্ঠানের ধ্বংসাত্মক প্রতিযোগিতায় নাভিশ্বাস উঠেছে শিল্প-কলকারখানার মালিকদের। এর আগে হবিগঞ্জ জেলায় ৬ মাসের বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে আরইবি আর পিজিসিবির খামখেয়ালিপনায় ৩১ দিনে ৩৩ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে।

এই লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল সর্বনিম্ন ২ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ ঘণ্টা। শিল্পকারখানার মালিকরা বলেছেন উৎপাদনের পিক আওয়ারেই লোডশেডিংগুলো করা হচ্ছে।

যা সরকার ও শিল্প-প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। তাদের অভিযোগ বিশ্বের সব শিল্পোন্নত দেশে সঞ্চালন লাইনের মেরামত ও আপগ্রেডের কাজ হয় অফপিক আওয়ারে। যখন কারখানা বন্ধ থাকে।

আমাদের দেশে হচ্ছে তার উল্টো। কিন্তু আরইবি আর পিজিসিবির কেউ এই তথ্য মানতে নারাজ। আরইবি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন বলেছেন, লোডশেডিং হবেই। পৃথিবীর কোনো দেশ বলতে পারবে না লোডশেডিংমুক্ত।

শুধু হবিগঞ্জই নয়, দেশের কোথাও শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পারছে না পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। শিল্পের জন্য কোয়ালিটি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা তো দূরের কথা গ্রামাঞ্চলেও আরইবির লোডশেডিং এখন চরমে।

বিশ্লেষকদের কয়েকজন জানিয়েছেন, সরকার শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড গড়ে বাহবা নিতে চাইছে। কিন্তু সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন আধুনিকায়নে নজর নেই। এর ফলে উৎপাদিত বিদ্যুৎ অপচয় বা নষ্ট হচ্ছে। কারণ বিদ্যুৎ তো সঞ্চয় করে রাখা যায় না।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিল্পপতি তাদের শিল্পকারখানায় প্রতিদিন কতবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে এবং তাতে বিপুল অংকের ক্ষতির বিষয়টি আরইবির নজরে এনে প্রতিকার দাবি করেন।

এর মধ্যে আরইবি সূত্রে প্রাপ্ত এক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর প্রদত্ত তথ্যে দেখা গেছে, তার একটি কারখানায় একবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটলে ৫২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়।

এই হিসাবে তার ৫টি কারখানায় একবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে তিনি ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার আর্থির ক্ষতির সম্মুখীন হন। কারণ একবার বিদ্যুৎ গেলে কারখানার অত্যাধুনিক কম্পিউটারাইজ ও প্রোডাকশন লাইন ব্যাচ ওয়াইজ হওয়ায় প্রতিটি কারখানা পরবর্তী উৎপাদনে যেতে কমপক্ষে ২ ঘণ্টা সময় লাগে।

এতে ওই ব্যাচটির সম্পূর্ণ মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। যার মূল্য প্রতি ঘণ্টায় ২৬ লাখ টাকা করে ২ ঘণ্টায় ৫২ লাখ টাকা। এছাড়া কম্পিউটারাইজ মেশিনারিজগুলো চালু অবস্থায় হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বন্ধ হলে সফটওয়্যার সিস্টেমও নষ্ট হয়ে যায়। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here