শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোলঃ বেনাপোলের শ্রী শ্রী হরিদাস ঠাকুরের পাটবাড়ি আশ্রমে তিন শতাব্দী উপভোগ করা পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ শিবানন্দ বাবাজির আগমন উপলক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী নাম কীর্ত্তণ চলছে। বুধবার সকালে তিনি ভারত থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট হয়ে পাটবাড়ী আশ্রমে পৌছালে বাংলাদেশের সহ¯্রাধীক ভক্ত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে গুরুজীর দর্শণ করেন। শুক্রবার সকালে তিনি এখান থেকে ভারতে ফিরে যাবেন।
ভারত সরকারের দেওয়া পাসর্পোট ও আঁধার কার্ড অনুযায়ী শিবানন্দ সন্যাসীর জন্ম তারিখ ৮ আগষ্ট ১৮৯৬ সাল। তাঁর র্বতমান বয়স ১২৪ বছর। গীনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডের রেকর্ডসে সবচেয়ে বেশি বয়সি জীবিত মানুষের রেকর্ডের অধিকারী জাপানের জিরোইমন কিমুরার বয়স ১১৮ বছর। তাতে প্রায় ৬ বছর বেশি শিবানন্দ বাবাজির। এজন্য ভক্তরা তাঁর নাম গিনেসে ওঠানোর জন্য তৎপর হয়েছেন। যা আগামীতে স্থান পাবে বলে দাবি করেন বক্তবৃন্দরা।
তবে, ১২৪ বছর বয়স্ক বাবাজীর চেহারায় নেই তেমন বয়সের ছাপ। রীতিমতো স্বুস্থ্য-স্বাভাবিক এক বয়স তাঁর। নিয়মিত যোগচর্চা, পরিমিত আহার এবং যৌনহীনতাই তাঁর এই দীর্ঘ জীবনের রহস্য বলে নিজেই জানিয়েছেন তিনি। রোজ ৪লিটার জলপান করেন তিনি। তাঁরমতে এক লিটার পানি লাগে হৃদপিন্ডের জন্য, এক লিটার লাগে কিডনির জন্য, বাকি ২লিটার লিভার ও পাকস্থলী পরিস্কার করে।
শিবানন্দ বাবাজীর সফরসঙ্গী তন্দ্রা কুন্ডু জানান, ১২৪ বছর বয়সী বাবাজী তাঁর জীবনে মাত্র দুই বছর পূর্বে ভক্তদের অনুরোধে কলকাতার এ্যাপোলো হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছিলেন। যা দেখে ডাক্তাররা হতবাক হয়েছিলেন। ফলাফল ছিলো যথাযথ একজন স্বাভাবিক বয়সের মানুষের মতো।
তিনি বলেন, ১২৪ বছর বয়সী একজন মানুষ কিভাবে শারীরিকভাবে এতটা ঠিকঠাক আছেন? তার জীবনের রহস্যটা এখানেই। তিনি প্রতিদিন সেদ্ধ সবজির সঙ্গে বাটা কাঁচা লঙ্কা খাচ্ছেন। ব্যায়াম করছেন। বিশেষত যোগ এবং মনপ্রাণ দিয়ে সবাইকে সাহায্য করে আনন্দিত হয়ে উঠেছেন।
ভারতের বেনারস থেকে আসা এই সনাতন ধর্মের সন্যাসী গুরুজীর জন্ম বাংলাদেশের সিলেট জেলায় এক ভিখারীর ঘরে। তাঁর মা-বাবা ও দিদি দ্বরে দ্বরে ভিক্ষা করেই জীবন ধারণ করতেন। তিনি ৪বছর যাবত ভাতের মাঢ় খেয়ে বড় হয়েছেন। তাঁর মা-বাবা অভাবের তাড়নায় তাঁকে নবদ্বীপ নিবাসী এক বাবাজীকে দান করেছিলেন। ৬ বছর বয়সে বাড়ি গিয়ে জানতে পারেন তাঁর দিদি াভাবের তাড়নায় না খেয়ে মারাগেছেন। তারপর মাত্র ২ ঘন্টার ব্যবধানে বাবা-মা ইহলোক ত্যাগ করেন। তিনি সামাজিক প্রথাকে অস্বীকার করে মা-বাবার মুখাগ্নি না করে চরণে আগুন দেন। শ্রাদ্ধশান্তি শেষ করে স˜গুরু ওস্কারানন্দ গোস্বামীর দীক্ষা গ্রহণ করে দিব্যজ্ঞান লাভ করেন। তাঁর কোন প্রথাগত শিক্ষা নেই। তিনি বলেন, আমার কোন রোগ নেই, কারণ আমার কোনও কামনা-বাসনা নেই। তিনি ভক্তবৃন্দের অনুরোধে অনেকগুলী দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি ইংরেজীতে খুবই পারদর্শী।
এসময় তাঁর সফর সঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের তন্দ্রা কুন্ড, নন্দা গড়াই, শিপ্রা দেবী, পূর্ণিমা সাহা ও অঞ্জলী দে।
উপস্থিত ছিলেন শিবানন্দ বাবাজীর ভক্ত ঢাকা হাইকোর্টের বিচারক কৃষ্ণা দেব সাহা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আর্থপেডিক্স ডাক্তারসহ অসংখ্য ভক্তবৃন্দ।