খবর৭১: আগামী ২৪–২৫ জানুয়ারি কুমিল্লার কোটবাড়ী অনুষ্ঠিত হবে অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অবলিভার ডিজিজেজ বাংলাদেশের ১৬তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন ‘বঙ্গবন্ধু লিভারকন ২০২০’।বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের জাতীয় সংগঠন আয়োজিত এই সম্মেলনটির আয়োজন করাহবে বাংলাদেশ একাডেমি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্টে।
বাংলাদেশে লিভার রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। এর প্রধান কারণ হেপাটাইটিসবি ভাইরাস। পাশাপাশি ফ্যাটি লিভার আর হেপাটাইটিস সি ভাইরাসও এদেশে লিভারের জটিলরোগগুলোর অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে হেপাটোলজির যাত্রা শুরু নব্বইয়ের দশকে। তবে এদেশেহেপাটোলজির বিকাশ ও প্রসার বর্তমান সরকারের হাত ধরে। ২০০৯ সালে যেখানে এদেশে শুধুবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের একমাত্র লিভার ডিপার্টমেন্ট ছিল, সেখানেএখন ২০টির বেশি সরকারি মেডিকেল কলেজে লিভার বিশেষজ্ঞের পদ রয়েছে। পাশাপাশি আরওনতুন নতুন পদ সৃষ্টি প্রক্রিয়াধীন।
বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞরা এদেশে লিভার রোগের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রবর্তনেগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এদেশে লিভার ফেইলিউরের চিকিৎসায় অটোলোগাস হেমোপয়েটিকস্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন ও প্লাজমা এক্সচেঞ্জ প্রবর্তনের কৃতিত্ব তাদের। বিশেষ করে অটোলোগাসহেমোপয়েটিক স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশনে তাদের অভিজ্ঞতা এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনাও একাধিকবার এজন্য বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা করেন।
পাশাপাশি লিভার ক্যান্সারের সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ট্রান্স আর্টারিয়াল কেমোঅ্যাম্বোলাইজেশনও আমাদের লিভার বিশেষজ্ঞরা নিয়মিতভাবে সাফল্যের সাথে করছে। তবেলিভার বিশেষজ্ঞদের সবচেয়ে বড় অর্জনটি হলো ন্যাসভ্যাক।
অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব লিভার ডিজিজেজ বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল এবংবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ও বর্তমানে জাপানের এহিমে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত প্রবাসী ডা. শেখমোহাম্মদ ফজলে আকবরের গবেষণালব্ধ এই ওষুধটি এরই মধ্যে কিউবা, বেলারুশ, ইকুয়েডর, নিকারগুয়া ও এঙ্গোলায় রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে। পাশাপাশি বর্তমানে বাংলাদেশি লিভার বিশেষজ্ঞদেরসহযোগিতায় জাপানেও ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে।
ন্যাসভ্যাকের গবেষকরা তাদের গবেষণার জন্য একাধিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন, যারমধ্যে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব লিভার ডিজিজেজ এবং ইউরো এশিয়ানগ্যাস্ট্রো এন্টারোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের নাম অন্যতম। ভয়েস অব আমেরিকা (ভোয়া) এইগবেষণার জন্য অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)-এর সাক্ষাৎকার প্রচার করেছিল। তবেন্যাসভ্যাকের সবচাইতে বড় অর্জনটি হলো বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এদেশে ডেভেলপকরা ‘প্রথম নভেল মলিকিউল’ হিসেবে ন্যাসভ্যাকের রেসিপি অনুমোদন করেছে।
বাংলাদেশের লিভার গবেষকদের গবেষণা ল্যানসেটসহ বিভিন্ন দেশি–বিদেশি বৈজ্ঞানিক জার্নালেনিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। পাশপাশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব লিভারডিজিজেজ, ইউরোপিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব লিভার ডিজিজেজ, এশিয়ানপ্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব লিভার এবং ইউরোএশিয়ান গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মতো আন্তর্জাতিক লিভার সংগঠনগুলোর বৈজ্ঞানিকসম্মেলনেও তারা নিয়মিতভাবে তাদের গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে আসছেন।
অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব লিভার ডিজিজেজ বাংলাদেশের নিয়মিত বৈজ্ঞানিক প্রকাশনাবাংলাদেশ জার্নাল অব হেপাটোলজি এই অঞ্চলের প্রথম লিভার বিষয়ক বৈজ্ঞানিক জার্নাল।পাশাপাশি বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের সম্পাদিত লিভার বিষয়ক টেক্সটবুকগুলোঅ্যালসেভিয়ের, ম্যাকমিলান ও জেপির মতো খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক মেডিকেল প্রকাশনা সংস্থাথেকে প্রকাশিত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে সামনে রেখে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অ্যাসোসিয়েশন ফরদ্য স্টাডি অব লিভার ডিজিজেজ বাংলাদেশ তাদের ১৬তম বার্ষিক আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিকসম্মেলনটি জাতির পিতাকে উৎসর্গ করেছে। সারা দেশ থেকে সাড়ে চারশ’র বেশি লিভার, মেডিসিন, সার্জারি ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ ‘বঙ্গবন্ধু লিভারকন ২০২০’-এ অংশ নিচ্ছেন। আশা করা হচ্ছে‘বঙ্গবন্ধু লিভারকন ২০২০’ দেশি–বিদেশি লিভার বিশেষজ্ঞদের মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করবে এবংআগামীতে এদেশের লিভার রোগের চিকিৎসার বিকাশ ও আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।