খবর৭১ঃ আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) কেন্দ্র চিহ্নিত করতে আগামী ২২ জানুয়ারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনও ইসির কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই বৈঠকেই আলোচনা সাপেক্ষে দুই সিটির ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা ছাড়াও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ইসির সঙ্গে বৈঠক সামনে রেখে রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে সভায় জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, মহাপুলিশ পরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনার, বিজিবি মহাপরিচালক, ডিজিএফআই পরিচালক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, নির্বাচন উপলক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি বা কর্মপরিকল্পনা জানতে চেয়ে ইসি চিঠি দিয়েছিল। রোববারের বৈঠক ছিল সেই কর্মপরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা, যা ২২ জানুয়ারি ইসির সঙ্গে সভায় চূড়ান্ত হবে। তবে দুই সিটির ঝুঁকিপুর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়নি। এ সংক্রান্ত গোয়েন্দা প্রতিবেদন ইসিতে পাঠানো হয়েছে। তারাই তা যাচাই-বাছাই করে ২২ জানুয়ারির বৈঠকে চূড়ান্ত করবে। সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। তবে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে ৫ জন পুলিশ ও ১৭ জন আনসার সদস্যসহ মোট ২২ জন সদস্য মোতায়েনের প্রস্তাব করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে এই সংখ্যা বাড়বে। এছাড়া নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এলাকায় আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন না করা এবং ১ ফেব্র“য়ারি নির্বাচনের দিন ঢাকা মহানগর এলাকায় মোটরসাইকেল, ট্যাক্সিক্যাব ও ট্রাক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া সীমিত আকারে গণপরিবহন চালুর বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করার টার্গেট নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ানো হবে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে, এসব নিয়ে রোববারের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ইভিএম নিয়ে যেন কোনো ধরনের প্রশ্ন না ওঠে সে বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানান ওই কর্মকর্তারা।
বৈঠক শেষে কোনো ব্রিফিং করেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। লিফটের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে তাদের ছাড়া পুলিশ কাউকেই ধরছে না। নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিরাপত্তা বাহিনী ন্যস্ত আছে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সবাই তৈরি। নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। গোয়েন্দা সংস্থা, নিরাপত্তা বাহিনী যেখানে যা প্রয়োজন, নির্বাচন কমিশন যেভাবে যা দেবে আমরা তৈরি আছি। আমাদের সুপারিশগুলো নির্বাচন কমিশনকে দিচ্ছি। সে অনুযায়ী বাকি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোনোটাকেই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র মনে হচ্ছে না। যদি থাকে কমিশন থেকে লিস্ট আসবে, সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। বইমেলার নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে যা কিছু প্রয়োজন সবকিছু ব্যবস্থা রয়েছে। আনসার, পুলিশ, র্যাব যা প্রয়োজন হয় প্রস্তুত আছে। প্রয়োজনে বিজিবিও প্রস্তুত থাকবে।
আগামী ২২ জানুয়ারি নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সভাপতিত্বে ওই বৈঠক হবে। ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সংশ্লিষ্ট বাহিনী, সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন উপলক্ষে আগামী ২২ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা হবে। সভায় নির্বাচন কমিশনাররাও উপস্থিত থাকবেন। মহাপুলিশ পরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনার, বিজিবি মহাপরিচালক, ডিজিএফআই পরিচালক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগামী ১ ফেব্র“য়ারি ঢাকার দুই সিটির ভোটগ্রহণ হবে।