কর্ণফুলীর তলদেশে কাজ এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধু টানেলের
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীতে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেল। টানেল নির্মাণ শেষ হলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে অন্তত ৫০ কিলোমিটার। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সাশ্রয় হবে জ্বালানি, বাঁচবে সময়।
সমৃদ্ধ হবে অর্থনীতি। এই টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রামে হবে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’।সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) সূত্রে জানা যায়, সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ৪৪৫ কিলোমিটার।
এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ হলে ঢাকার যানবাহনগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট হয়ে বন্দর টোল রোড-নির্মাণাধীন আউটার রিং রোড-পতেঙ্গা হয়ে কর্ণফুলী টানেল ব্যবহার করলে পথ কমবে প্রায় ১৫ কিলোমিটার। তাছাড়া কর্ণফুলী টানেল হয়ে আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল ঘাট-চাতরি চৌমুহনী-বাঁশখালী-পেকুয়ার মগনামা হয়ে সরাসরি কক্সবাজার সদরে যুক্ত হতে সড়ক কমবে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। দুই দিকে দূরত্ব কমবে প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়ক। বর্তমানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) উদ্যোগে পতেঙ্গার আউটার রিং রোডের কাজ চলছে। পক্ষান্তরে আনোয়ারা-বাঁশখালী-পেকুয়া হয়ে কক্সবাজারের বিকল্প সড়ক নির্মাণে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া নতুন করে তৈরি হবে টানেল থেকে কালাবিবি দীঘি হয়ে ক্রসিং পর্যন্ত সড়কটি।
পর্যায়ক্রমে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করা হবে। এসব সড়ক যানচলাচলের উপযোগী হলে কমবে সময়, সাশ্রয় হবে অর্থ ও জ্বালানির। চউকের প্রধান প্রকৌশলী শামস মোহাম্মদ হাসান বলেন, প্রায় তিন বছর আগে থেকেই আমরা আউটার রিং রোড নির্মাণ করছি তখনই আমরা সুদূরপ্রসারী চিন্তা করে টানেলের প্রবেশ পথটি বর্তমান স্থানে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলাম। এখন টানেল নির্মাণকাজ শেষ হলে ঢাকার যানবাহনগুলোকে আর নগর হয়ে যেতে হবে না। আউটার রিং রোড দিয়ে টানেল হয়ে আনোয়ারা-বাঁশখালী হয়ে কক্সবাজার যেতে পারবে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় এটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। সওজ দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, টানেলকে কেন্দ্র করে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। একটি টানেল হয়ে আনোয়ারা কালাবিবি দীঘি-শিকলবাহা ক্রসিং হয়ে কক্সবাজার মহাসড়কে যুক্ত হবে। ৪০৭ কোটি টাকার প্রকল্পটি এখন একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
অপরটি টানেল হয়ে আনোয়ারা-বাঁশখালী-পেকুয়া হয়ে কক্সবাজার সদর পর্যন্ত। এটি এখন ডিপিপি তৈরির পর্যায়ে। দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল খননকাজ উদ্বোধন করেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন অর্থায়ন করছে প্রায় চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চীনের সাংহাইয়ের ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ ধারণাকে সামনে রেখে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার। ২০২২ সালে এটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা। বর্তমানে টানেলের কাজ ৫৩ শতাংশ শেষ হয়েছে।