খবর৭১ঃ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএমেও জাল ভোট দেয়া সম্ভব বলে স্বীকার করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রফিকুল ইসলাম। তবে এটা সম্ভব তখনই যখন কেউ ভোটকেন্দ্র দখল করে নেয়। এজন্য ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কোনোভাবেই যেন ভোটকেন্দ্র কেউ দখল করতে না পারে সে ব্যাপারে কী কী করণীয় সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এই কমিশনার।
শুক্রবার রাজধানীর আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটিতে ইভিএমে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো শুরু থেকেই ইভিএমের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আসছে। তবে নির্বাচন কমিশন বারবার আশ্বস্ত করেছে, ইভিএমে জাল ভোট দেয়া সম্ভব নয়। ইভিএমে আস্থা রাখতে আহ্বান জানিয়েছে বিরোধী দলগুলোর প্রতি।
ইভিএমে কীভাবে জাল ভোট দেয়া যায় এ ব্যাপারে ইসি রফিকুল বলেন, ‘ভোটার এসে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ব্যালট পেপার পেল; কিন্তু আরেকজন দৌড় দিয়ে ঢুকে তার ভোটটা দিয়ে দিলো। এরকম যদি হয় তাহলে কিন্তু জাল ভোট দেওয়া সম্ভব।’
উপস্থিত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ‘রাজা’ হিসেবে উল্লেখ করে ইসি রফিকুল বলেন, ‘একদিনের জন্য আপনি হচ্ছেন সেই কেন্দ্রের রাজা। আপনি যখন রাজা হয়েছেন তখন আপনার প্রথম দায়িত্বটা হচ্ছে রাজত্বটাকে চিহ্নিত করা। যেসব স্কুলে সীমানা প্রাচীর নেই সেখানে অন্তত একটা বাঁশ দিয়ে হলেও সীমানা প্রাচীর নির্ধারণ করবেন।’
সীমান চিহ্নিত করার পরও দেশে কিছু জায়গায় বর্ডার গার্ড দেওয়া আছে উল্লেখ করে তিনি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনার সাথেও কিছু লোক থাকবে যারা হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আপনার দায়িত্ব হচ্ছে তাদেরকে (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) দায়িত্ব দেওয়া যাতে করে কোনো অবস্থাতেই অনুমতিবিহীন কেউ আপনার সীমানায় রাজত্বে ঢুকতে না পারে।’
প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের হুঁশিয়ারি দিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রটেক্ট করতে যদি ব্যর্থ হন তাহলে আপানাকে আমি দায়ী করবো। প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে আপনার দায়িত্ব হচ্ছে রাজত্বটাকে রক্ষা করা। ঠিক একইভাবে রুমটা হচ্ছে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের তালুক কেন্দ্র। এই তালুকটাকে রক্ষা করা। ’
চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট পড়ার হারে হতাশা প্রকাশ করে এই কমিশনার বলেন, ‘যদিও সেটা জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন, এরকম ঢাকা শহরে হওয়ার কথা না। ইভিএমের মাধ্যমে ইলেকশন হলে এই যন্ত্রটা যে সব তা কিন্তু না। ভোট চলাকালে ততটুকু ভোটার, ততটুকু সাংবাদিক, ততটুকু পর্যবেক্ষক ঢুকতে দিন যাতে আপনার কার্যক্রমে ব্যাঘাত না ঘটে।’
বাঙালি জাতিকে ‘অসহিষ্ণু’উল্লেখ করে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যখনই লাইন দেখবে তখনই ভাঙতে চাইবে।’ নিজের ব্যক্তিজীবনের গাড়ির উদাহরণ টেনে এই কমিশনার বলেন, ‘আমার কোনো তাড়া নাই তারপরও উল্টো দিক দিয়ে গাড়ি দেবে টান। এই অভ্যাসের কারণেই লাইনটা ঠিক থাকে না। লাইন নিয়ে মারামারি হবে দায়টা পড়বে আপনার ঘাড়ে।’
সরস্বতী পূজার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে কোনোরকম আঘাত দেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশন ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।’
নির্বাচন কমিশন বিপদের মধ্যে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা আইনানুগ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাই।’
দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেনের সভাপতিত্বে এই নির্বাচনে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা কর্মশালা উপস্থিত ছিলেন।