খবর৭১ঃ ঋণখেলাপির মামলায় সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে গ্রেপ্তার করতে তাদের বাসায় হানা দিয়েছিল পুলিশ। তবে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পুলিশ পরোয়ানা তামিলে গড়িমসি করায় আসামিরা পালানোর সুযোগ পেয়েছে।
বেসরকারি এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকের পক্ষ থেকে করা মামলায় ওই সাবেক আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
গত মঙ্গলবার তাদের গ্রেপ্তারের অনুরোধ নিয়ে গুলশান থানায় যায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পুলিশ যথাসময়ে গ্রেপ্তার অভিযানে যায়নি বলে অভিযোগ ব্যাংকের। আজ বুধবার পুলিশ আসামিদের বাসায় গিয়ে তাদের কাউকে পায়নি বলে জানায়।
এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আফজাল আজ রাতে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে আসামিদের নেওয়া ঋণ বর্তমানে সুদাসলে ৫৫ কোটি ৬২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। পুরো টাকাই এখন মন্দমানের খেলাপি। তারা টাকা ফেরত না দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
আসামিরা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি বলে দাবি করেন তারিক আফজাল। প্রশাসন সহযোগিতা না করলে কীভাবে এ ধরনের ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় হবে- এমন হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের টাকা নিয়ে পালিয়েছে; ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। কিন্তু পুলিশ ধরতে পারছে না!’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে পুলিশের গুলশান থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) কামরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী ও সন্তানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। বলেন, ‘কিন্তু তারা অনেক আগেই বিদেশে চলে গেছেন।’
গ্রেপ্তারে গড়িমসির অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো, যেহেতু তারা বাসায় নেই, মঙ্গলবার গেলেও তো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হতো না। বুধবার আমরা তাদের বাসায় গিয়ে শুধু সাবেক মন্ত্রীকে পেয়েছি। তাকে ওয়ারেন্টের কথা বলে এসেছি।’
এবি ব্যাংক থেকে পাঠানো তথ্যে দেখা যায়, ২০১৩ ও ১৪ সালে ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখা থেকে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ঋণ নেয় লতিফ সিদ্দিকীর পরিবার। ধলেশ্বরী ও মেজেস্টিকা হোল্ডিং লিমিটেডের নামে এ ঋণ নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ঋণ পরিশোধ না করায় বর্তমানে তা ৫৫ কোটি ৬২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
ধলেশ্বরী লিমিটেডের চেয়ারম্যান লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তার ছেলে অনিক সিদ্দিকী এবং পরিচালক তার মেয়ে রাইনা ফারজিন। আর মেজেস্টিকা হোল্ডিং লিমিটেডের চেয়ারম্যন লায়লা সিদ্দিকী এবং এমডি অনিক সিদ্দিকী।
ব্যাংকের তথ্যে আরও দেখা যায়, দীর্ঘদিন ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখা উভয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে। এরপর গত বছরের ২ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। সেই পরোয়ানা হাতে নিয়ে বুধবার ঋণখেলাপিদের ধরতে তাদের গুলশানের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু তাদের বাসায় পাওয়া যায়নি।
ঋণ খেলাপের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ধলেশ্বরী ও মেজেস্টিকা হোল্ডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অনিক সিদ্দিকীর সঙ্গে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। এরপর ফোন করার কারণ উল্লেখ করে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোনো জবাব আসেনি ওপাশ থেকে।