মিজানুর রহমান মিলন,সৈয়দপুর :
সৈয়দপুরে জীবন দিয়ে বাল্যবিয়ের প্রতিবাদ করলো স্কুল ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসি জান্নাতি (১৩)।গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের তীরেঁ ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে। এটি ঘটেছে উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের পশ্চিম বেলপুকুর সাতপাই মুচির হাট ডাঙ্গারবাড়ি এলাকায়।
সে ওই এলাকার মো. দুলাল হোসেনের মেয়ে।
থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নিহতের বাবা মো. দুলাল হোসেন একজন মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী। বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসী জান্নাতি পার্শ্ববর্তি সাতপাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। ঘটনার দিন গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তার বাবা মো. দুলাল হোসেন ও মা মোছো. মালেকা বেগম একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ উত্তোলন করতে গিয়েছিলেন সৈয়দপুর শহরে। আর এ সময় বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে সে ঘরের তীরের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। ঘটনাটি বুঝতে পেরে বাড়িতে থাকা তার একমাত্র ছোট ভাই মো. আশরাফুল চিৎকার শুরু করে। পরে ঋণ নিয়ে ফেরত আসা তার বাবা-মাসহ আশপাশের লোকজন দ্রুত ছুটে এসে ঘরের দরজা ভেঙে জান্নাতিকে নামায়।
এরপর তাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে খবর পেয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশ হাসপাতালে পৌঁছে স্কুল ছাত্রীর লাশ নিয়ে আসেন। এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, ওই স্কুল ছাত্রীর সঙ্গে প্রতিবেশী এক ছেলের বিয়ে ঠিক করেন তার বাবা-মা। আর বাল্য বিয়েতে রাজি ছিল না সে। অভিভাবকরা তাকে জোর করে বাল্য বিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। বিয়ে উপলক্ষে নেয়া হয়েছিল প্রস্তুতি। এজন্য তাঁর বাবা- মা বেসরকারি ওই সংস্থা থেকে ঋণও নেয় গতকাল মঙ্গলবার। তবে এলাকার অপর একটি সূত্র জানায়, প্রতিবেশী এক ছেলের সঙ্গে জান্নাতির প্রেম সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ অবস্থায় তার বাবা-মা তার অন্যত্র বিয়ে ঠিক করেন। আগামী শুক্রবার ওই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই বাল্যবিয়ের প্রতিবাদ করে মনের ক্ষোভে ও অভিমানে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে জান্নাতি। সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল হাসনাত খান স্কুল ছাত্রীর গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে স্কুল ছাত্রীর লাশের ময়নাতদন্তের জন্য নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ময়না তদন্ত শেষে মৃতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।