খবর৭১ঃ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পক্ষে-বিপক্ষে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। এরই মধ্যে ইভিএম কিনতে অতিরিক্ত ৩৭১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা খাত বা থোকে অর্থ না থাকায় বিশেষভাবে এই অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন সোমবার বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে যে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে তা নির্ধারিত বরাদ্দের অতিরিক্ত। তাছাড়া এডিপির থোকে যে বরাদ্দ ছিল তা সংকুলান হলে আমরাই বরাদ্দ দিতে পারতাম। এখন এডিপির আওতায়ও বাড়তি বরাদ্দ দেয়ার মতো অর্থ নেই।
তাই আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ দেয়ার জন্য সুপারিশ করে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি বরাদ্দ পাব। এই টাকায় ঢাকা সিটি কর্পোরশেনের জন্য ইভিএম মেশিন কেনা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটি নয়। তবে সারা দেশের নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে ইভিএম কেনা হচ্ছে সেজন্যই বাড়তি টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটির জন্য চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু এই টাকার সংকুলান না হওয়ায় ১৮ ডিসেম্বর বাড়তি ৩৭১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা চেয়ে পরিকল্পনা কমিশনে চিঠি পাঠায় নির্বাচন কমিশন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ থেকে ১ জানুয়ারি চিঠি দেয়া হয় কার্যক্রম বিভাগকে। কার্যক্রম বিভাগ থেকে ৯ জানুয়ারি এই বরাদ্দের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়া হয় অর্থ সচিবের কাছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা খাত থেকে বরাদ্দ দিতে অনুরোধ জানায় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এ খাতে সরকারি তহবিলের ৫০০ কোটি টাকা রক্ষিত ছিল।
ইতিমধ্যেই কয়েকটি প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়ায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটির চাহিদা অনুযায়ী এডিপিতে বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা খাত থেকে বরাদ্দ সংকুলান করার সুযোগ নেই।
সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইভিএম কেনার জন্য ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।
২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে (জিওবি) বাস্তবায়িত হচ্ছে।
২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। বহুল আলোচিত ইভিএম ক্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- দেশব্যাপী বিভিন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানে দেড় লাখ ইভিএম মেশিন ক্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা।
তাছাড়া নির্বাচন সংশ্লিষ্ট জনবলের জন্য ইভিএম ব্যবহার সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন এবং ইভিএমের মাধ্যমে ভোটদানে ভোটারদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।
আরও একটি প্রকল্পে অতিরিক্ত বরাদ্দ চাহিদা : এদিকে আরও একটি প্রকল্পে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর ইনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিস (আইডিইএ)’ প্রকল্পের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছর প্রকল্পটির অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে সরকারি তহবিলের ৩০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে, মোট ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পুনঃনির্ধারণ করে একসঙ্গে ছাড় করা প্রয়োজন। পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ থেকে বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা খাত থেকে এই বরাদ্দ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
তবে শর্ত দিয়ে বলা হয়েছে, বরাদ্দ করা অর্থ সংশোধিত এডিপির অঙ্গভিত্তিক ব্যয় বিভাজন অনুযায়ী সব বিধিবিধান অনুসরণ করে ব্যয় করতে হবে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে যথাযথভাবে প্রতিফলন করতে হবে।