খবর৭১ঃ
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন পেছানো বা এগোনোর বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশের দিকে তাকিয়ে আছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের তারিখ পেছানো নিয়ে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত থেকে যে নির্দেশনা আসবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে কমিশন। গতকাল রবিবার নির্বাচন কমিশনের এক অনানুষ্ঠানিক সভায় এমনই মত দেন কমিশনারগণ। ঐ সভায় নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার কর্মকর্তাদের ডেকে রিটের সর্বশেষ অবস্থা জেনে নির্দেশনা দেয় কমিশন। তবে ভোট পেছানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটিতে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আদালতে একটি রিট আবেদন হয়েছে। আদালত কোনো নির্দেশনা দিলে আমরা সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব। আপাতত কমিশনের ভোট পেছানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি আদালতেও গিয়েছে। কিন্তু আদালত নির্বাচন পেছানোর কথা বলেনি। আমরাও আমাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছি না। নির্বাচন ৩০ জানুয়ারিই থাকছে।’
বিকালে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন নির্বাচন কমিশনারগণ। ওই বৈঠকে আগামী ২ মার্চ ভোটার দিবস উদ্যাপন বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সরস্বতী পূজার কারণে ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি উত্থাপন করেন। পরে ইসির আইন শাখার কর্মকর্তাদের ডেকে রিট আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সভায় কর্মকর্তারা জানান, রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত থেকে এখনো কোনো রায় পাওয়া যায়নি। পরে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। আজ সোমবার পুনরায় বৈঠকে বসবে কমিশন।
এদিকে আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন পেছানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিট নতুন বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়েছে। রবিবার আবেদনটি বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অশোক ঘোষ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটির্নি জেনারেল নূর উস সাদিক।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর উস সাদিক বলেন, আবেদনটির ওপর সোমবার দুপুর ২টায় শুনানি হবে। আগামী ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা রয়েছে উল্লেখ করে গত ৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ এ রিট করেন।
ইসি সূত্রে জানা যায়, সরস্বতী পূজার সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসি) নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ মিলে যাওয়ায় বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিয়ে ভোট গ্রহণের তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়। সর্বশেষ ডিএসসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেনও পূজা উপলক্ষ্যে ভোট পেছানোর সুপারিশ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন ইসিতে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব মুখলেছুর রহমান বলেন, সরকারি ক্যালেন্ডারে ২৯ জানুয়ারি সরস্বতী পূজার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। সে অনুযায়ীই সবকিছু হওয়ার কথা। এর আগে গত ৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা এক চিঠিতে পূজার জন্য ভোট পেছাতে ডিএসসিসির রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। তার চিঠি বিবেচনায় নিয়েই রিটার্নিং কর্মকর্তা ১০ জানুয়ারি চিঠি দেন ইসিতে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ডিএসসিসি এলাকায় বিপুলসংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বী বাস করেন। এখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড়ো পূজামণ্ডপ রামকৃষ্ণ মিশন অবস্থিত। ঢাবি জগন্নাথ হলও একই এলাকায় অবস্থিত। এ দুই মণ্ডপ ঘিরে সরস্বতী পূজায় ব্যাপক জনসমাগম ঘটে। এছাড়া ডিএসসিসি নির্বাচনের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠানকে ভোটকেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে, তার অনেকগুলোতেই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পুরান ঢাকা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরস্বতী পূজা উদ্যাপন অনেকাংশেই সম্ভব হবে না। এসব বিবেচনায় নিয়েই রিটার্নিং কর্মকর্তা ডিএসসিসি নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ পেছানোর আবেদন জানান ইসিকে। এছাড়া ২২ ডিসেম্বর দুই সিটি নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন সিটি নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়ে চিঠি দেয় ইসিকে। সর্বশেষ রবিবার প্রধান নির্বাচন কশিনারকে চিঠি দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাত্ররা। পরে তারা নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন।