খবর৭১ঃ সংঘাতরত ইরান ও আমেরিকা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না করলে কোনো পক্ষই লাভবান হতে পারবে না৷ এ সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকেরা৷ বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলের আলোচনায় উঠে এসেছে এমন আশঙ্কার কথা৷
মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহতের পর দুপক্ষই একে অপরকে নানাভাবে হুঁশিয়ারি-হুমকি দিয়ে আসছে৷ কিন্তু দুপক্ষই বলছে, তারা কোনো যুদ্ধ শুরু করতে চায় না৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, সোলেইমানি হত্যার মাধ্যমে অ্যামেরিকা যুদ্ধ শুরু করেনি, বরং যুদ্ধ ঠেকিয়েছে৷ অন্যদিকে, ইরানও এর প্রতিশোধ নিতে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর পালটা হামলা না হলে আপাতত শান্ত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে৷
এ বিষয়ে ডয়চে ভেলের ফার্সি বিভাগের সাংবাদিক জামশেদ বারজিগর বলেন, ‘ইরান যদি মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন সৈন্য সরানোর দাবির বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নেয়, তা আমেরিকা মানবে না৷ ফলে আলোচনায় না বসলে এ সংঘাত চলবে৷’
ইরানের বাইরে ইরানের স্বার্থ রক্ষায় সামরিক দিকগুলোর দায়িত্ব ছিল কুদস ফোর্সের৷ সে ফোর্সেরই কমান্ডার ছিলেন জেনারেল সোলেইমানি৷ ফলে সোলেইমানির মৃত্যুর পর মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার মাধ্যমে কুদস বাহিনী যে দুর্বল হয়ে পড়েনি, এমন একটি বার্তা ইরান বিশ্বকে দিতে চেয়েছে বলেও মনে করেন জামশিদ৷
এমন হামলা-পালটা হামলা, হুমকি, হুঁশিয়ারির বিপদের দিকটাও মনে রাখতে বলছেন ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের সাংবাদিক সঞ্জীব বর্মণ৷ তিনি বলেন, ‘এসব করতে করতে যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটে, যাতে স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে৷ বড় কিছু হলে অ্যামেরিকা বাধ্য হবে আরও বড় আকারের হামলা চালাতে, তখন ইরানও আবার হামলা চালাবে৷’
এর ফলে বিভিন্ন পরাশক্তি এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কার কথা জানান সঞ্জীব৷ তিনি বলেন, ‘আমরা জানি রাশিয়া ও চীন নানাভাবে ইরানকে সহায়তা করে থাকে৷ এরকম একটি সংঘাতের ক্ষেত্রে তাদের পক্ষেও হাত গুটিয়ে থাকা সম্ভব হবে না৷ তখন যুদ্ধটা বৃহত্তর পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ এমনকি ইসরায়েল ও সৌদি আরবও এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে৷’
সোলেইমানির মৃত্যুর পর শুধু ইরান নয়, এর আশেপাশের বিভিন্ন দেশে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোও প্রতিশোধ নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে৷ এর মধ্যে ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া যেমন রয়েছে, লেবাননের হেজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাসের নামও৷
ফলে জামশেদ মনে করেন আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে কুদস ফোর্সের সহযোগী শক্তিরাও চুপ থাকবে না৷ তিনি বলেন, ‘সোলেইমানির মৃত্যুর পর আগামী কয়েক মাসের জন্য ইরান কুদস ফোর্সের বাজেট ২০০ মিলিয়ন ডলার বাড়িয়েছে৷ ইরানের সঙ্গে বিভিন্ন দেশে নানা গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে৷ ফলে ইরান বার্তা দিতে চায় কুদস ফোর্স এখনো আগের মতো শক্তিশালী রয়েছে এবং সোলেইমানির মৃত্যুতে এর শক্তির কোনো পরিবর্তন হয়নি৷’
আঞ্চলিক সংঘাত শুরু হলে এই শক্তিগুলো কাজে লাগিয়ে শুধু ইরান নয়, ইরানের আশেপাশের বিভিন্ন দেশ থেকেও হামলা-আক্রমণ চালানোর ক্ষমতা রয়েছে বলেও মনে করেন জামশেদ৷