খবর৭১ঃ ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বাতিলের আহ্বান জানানোর একদিন পর নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে নিজেদের শঙ্কার কথা জানালো বিএনপি। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা তাদের শঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছেন, ইভিএম ব্যবহারে তারা অনড়।
সোমবার বিকাল চারটায় নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির দুই মেয়রপ্রার্থীসহ দলটির প্রতিনিধিরা। বৈঠক শেষে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কে এম নূরুল হুদা ও বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘বাক্স ও ব্যালট ছিনতাই এবং পেপার লুটসহ অনিয়ম দূর করতে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তে আমরা অনড়।’
সাক্ষাৎকালে বিএনপি নেতারা ইভিএমের বিরোধিতাসহ নির্বাচনের সময় দল সমর্থিত ও নেতাকর্মীদের পুলিশি হয়রানি বা গ্রেপ্তার না করতে সিইসির সহযোগিতা চান। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান দলটির নেতারা।
সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় বিএনপির প্রার্থীদের অহেতুক গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হবে।’
আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য ৩৫ হাজার ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রস্তুত রেখেছে নির্বাচন কমিশন। দুই সিটিতে থাকছে দুই হাজার ৪০০ এর বেশি ভোটকেন্দ্র। আর ১৪ হাজার ৬০০’র মতো ভোটকক্ষ থাকছে।
শুরু থেকেই বিএনপি ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছে। রবিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। ইভিএমে সরকারি দলকে জয়ী করতে কমিশন ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এর একদিন পর কমিশনে গিয়ে ইভিএম সম্পর্কে আপত্তি জানালো বিএনপি।
নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে নীরবে নিঃশব্দে ভোটচুরির প্রকল্প হলো ইভিএম। পৃথিবীর দুইশ দেশের মধ্যে মাত্র চারটি দেশে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। এই চারটি দেশের সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কোনোটাই বিতর্কিত নয়। বাংলাদেশের সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দুটিই বিতর্কিত। ফলে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ইভিএম অন্তরায়।’
খসরু বলেন, ‘২০১৪ সালে ভোটারবিহীন প্রার্থীবিহীন একটা নির্বাচন করে সরকার ক্ষমতা দখল করেছে। ২০১৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এখন আবার এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে। এখন ক্ষমতা দখলের একটি নতুন প্রক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি সেটি হলো ইভিএম।’
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘ইভিএমের মাধ্যমে ভোটচুরির যে প্রক্রিয়া সেটা হলো একেবারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নীরবে নিঃশব্দে ভোটচুরির একটি প্রকল্প ছাড়া আর কিছুই না। নির্বাচনের ফলাফল কী হবে সেটা নির্ভর করবে ইভিএমের প্রোগ্রামের ওপর। জনগণ যে ভোট দেবে সে ভোটটা কাকে দেবে তার পেপার ট্রে নাই। ট্রে না থাকার কারণে ইভিএমের টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য জামিলুর রেজা চৌধুরী এই প্রকল্পে সই করেননি। ফলে সেখানে ভেরিফাই বা পরীক্ষা করার কোনো সুযোগ নাই। তারপরও নির্বাচন কমিশন রহস্যজনক কারণে ইভিএমে গেছে।’
‘জনগণ সারা দিন ভোট দেবে তাতে কোনো লাভ হবে না। কারণ ইভিএম এর প্রোগ্রাম যেভাবে সেট করা আছে সেভাবেই ফলাফল আসবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও প্রযুক্তির মাধ্যমে টাকা চুরি করা হয়েছে। ফলে ইভিএম একই প্রক্রিয়ায় ভোট চুরি হবে। এর মাধ্যমে জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাবে না।’
দলের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমাদের একজন প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরেকজনকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজ তাকে মুন্সীগঞ্জের আলু ক্ষেতে পাওয়া গেছে। সংরক্ষিত নারী আসনের আমাদের এক প্রার্থীর বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। ভয়-ভীতি দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরিয়ে ফেলার যে প্রক্রিয়া তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। অভিযানের নামে দেশের বিভিন্ন অভিযানের নামে বিএনপি প্রার্থীর সমর্থক এজেন্ট হয়রানি করা হয়। বিষয়টি আমরা নির্বাচন কমিশনে তুলে ধরেছি। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন এই ধরনের অভিযান এবার হবে না।’
খসরু বলেন, ‘৩০ তারিখ পর্যন্ত আর কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না যদি না দৃশ্যমান বড় ধরনের কোনো অঘটন না ঘটে। পূর্বের কোনো মামলায় কোনো গ্রেপ্তার হবে না বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।’