খবর৭১ঃ ‘ক্যাসিনো সাঈদ’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অপসারিত কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদ দেশে ফিরেছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোনো কারণে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হলে তাঁর জায়গায় দাঁড়াবেন তাঁর স্ত্রী ফারহানা আহম্মেদ (বৈশাখী)। মমিনুল হক গতকাল রোববার নিজেই সংবাদ মাধ্যমকে এ কথা জানান।
ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সাবেক এই যুগ্ম সম্পাদক দেশে ফিরেছেন গত ২৬ ডিসেম্বর। গত সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে হকি টিমকে নিয়ে তিনি মালয়েশিয়ায় যান। এর কিছুদিনের মাথায় ১৮ সেপ্টেম্বর র্যাব ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করলে সাঈদ আত্মগোপনে চলে যান। তিন মাস পর আবারও ঢাকায় ফিরেছেন। তিনি বিদেশে থাকার সময়ই পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) বিদেশযাত্রায় তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো বলতে শুরু করে, খেলার ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনার অন্যতম রূপকার এই সাঈদকে তারা খুঁজে পাচ্ছে না।
তবে সাঈদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, তিনি নির্বিঘ্নে বিদেশ থেকে ঢাকায় ফিরেছেন। দলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে। তাঁর দাবি, তিনি নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য কিছু করেননি, যা কিছু করেছেন, সবই খেলাধুলা ও দলের জন্য। তাঁর সঙ্গে যা হয়েছে, সেটা ‘মিডিয়া ট্রায়াল’। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর বিরুদ্ধে যে মামলা করেছে, সেটাও ‘গাঁজাখুরি’ মামলা। তিনি আশা করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলেও পরে দলে ফিরতে পারবেন। কারণ, তিনি বহিরাগত নন। তাঁর পরিবারের সবাই বরাবর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
দুদকের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মমিনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তাঁর অভিযোগ, প্রত্যাহার হওয়া এই কাউন্সিলর অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্যাসিনো ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার ২৬১ টাকা অর্জন করেছেন।
এর আগে ২০১৫ সালে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে মমিনুল হক হলফনামা জমা দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, মেসার্স বৈশাখী এন্টারপ্রাইজ নামে তাঁর একটি ঠিকাদারি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখান থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ১৮ লাখ ৬৮ হাজার ৯৭৬ টাকা। এর বাইরে তাঁর নগদ টাকার পরিমাণ ৫ লাখ ৫ হাজার ৬৯৭ টাকা, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, আসবাব, প্রাইজবন্ড আছে পাঁচ লাখ টাকার আর মূলধন ১ কোটি ২ লাখ ৯৭ হাজার ৯০১ টাকা। এবারের হলফনামা এখনো পাওয়া যায়নি।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে জানা যায়, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও আরামবাগ ক্লাবে তিনি ক্যাসিনো চালু করে প্রচুর টাকা কামান।
গতকাল রোববার মতিঝিল–আরামবাগ এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মমিনুল হক ফিরেছেন কি না, সে বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত নন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা জানান, দল যাঁকেই মনোনয়ন দিক না কেন, তাঁদের অনেকেই আড়ালে মমিনুল হকের পক্ষে কাজ করছেন। যদি কোনো কারণে তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হয়, তাহলে তাঁর স্ত্রীর পক্ষে কাজ করবেন তাঁরা। তাঁদের একজন বলেন, জুয়া যার খেলতে মন চেয়েছে, সে খেলেছে। কাউন্সিলরের দোষ কী? আর ক্যাসিনো তিনি চালিয়েছেন মাত্র দুই বছর।
তবে মমিনুল হকের ফিরে আসা ও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করা নিয়ে যুবলীগের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। যদিও তাঁরা নাম প্রকাশ করতে চাননি।