খবর৭১ঃ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিঃশব্দ ভোট কারচুপির ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া আসন্ন ঢাকা দুই সিটির নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিষয়ে ইসি’র সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানায় দলটি।
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রচলিত কাগুজে ব্যালট পেপারে ভোট কারচুপিতে বর্তমান সরকার সফল হলেও তারা দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়েছে এবং হচ্ছে। তাই এবার তারা ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিঃশব্দ ভোট কারচুপির ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। যাতে রাতে বা দিবালোকে ভোট ডাকাতির মতো কোনো হৈচৈ থাকবে না। সবাই দেখবে সব ঠিকঠাক মতো চলছে; কিন্তু ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে অতি সহজে ভোট ডাকাতি সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
ফখরুল বলেন, ৩০ জানুয়ারির ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে কেএম নুরুল হুদা কমিশনের নেতৃত্বে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তনের যে কোনো নির্বাচনে ‘প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোটাধিকার হত্যার মহা ষড়যন্ত্র। জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার দায়িত্ববোধ থেকে বিএনপি নির্বাচন কমিশনের ইভিএম ব্যবহারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও বাতিলের দাবি জানাচ্ছে।
বিএনপি মহসচিব বলেন, আমরা আশা করি, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন জনগণের অধিকারহানির ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করবে। একই সঙ্গে তারা প্রচলিত ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করে জনগণের ভোটাধিকার নির্বিঘ্ন করবেন। কারণ, ইভিএমের তুলনায় কাগজের ব্যালটে ভোট দিতেই ভোটাররা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর ভোট কারচুপির নানা দিক তুলে ধরতে গুলশান কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
ইভিএমের নানা ত্রুটি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ইভিএমে প্রোগ্রামিংয়ে ভ্রান্তি, যান্ত্রিক ত্রুটি এবং বিদ্বেষাত্মক টেম্পারিং বা কারসাজির সুযোগ আছে। এ ছাড়া কম্পিউটারভিত্তিক ভোট প্রদান যন্ত্রের অন্তর্নিহিত দুর্বলতা, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ইভিএম নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিশেষ দলের পক্ষে নির্বাচনী ফলাফল পাইয়ে দেয়ার সুযোগ আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আমরা পুরো ব্যবস্থাটি বাতিলের দাবি জানিয়েছি। দেখি নির্বাচন কমিশন কি রি-অ্যাক্ট করে। তারপর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি লিবারেল ডেমোক্রেটি একটি দল। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলে বিশ্বাস করি। তাই এই মুহূর্তে ইসির অধীনে আর নির্বাচনে যাব না দল এখনও এমন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
ইভিএম ব্যবহারের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং স্টেকহোল্ডাররা এর বিরোধিতা করেছেন। এরপরও ইভিএম ব্যবহারের এই একতরফা সিদ্বান্ত সিটি নির্বাচনে নিঃশব্দ ডিজিটাল কারচুপির ষড়যন্ত্র বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, নগরবাসীর সেবা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। ডেঙ্গু প্রায় মহামারি রূপ ধারণ করে কয়েকশ’ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। জনশ্রুতি আছে, ডেঙ্গু ব্যর্থতায় ভোট প্রচারে জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে আওয়ামী লীগ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র সাঈদ খোকনকে বাদ দিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে প্রার্থী ভাড়া করতে বাধ্য হয়েছে।
ফখরুল বলেন, সরকার দীর্ঘকালের জন্য ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের অংশহিসেবে মূলত ইভিএম প্রকল্পকে সামনে নিয়ে এসেছে। কারণ কেবল ইভিএমের মাধ্যমেই দেশের সব মানুষ, দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম, নাগরিকসমাজ, রাজনৈতিক দলসহ সবাইকে অন্ধকারে রেখে রাষ্ট্রযন্ত্রের গুটিকতক দায়িত্বপ্রাপ্ত ফ্যাসিস্ট সহযোগীদের যোগসাজশে রাষ্ট্রক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত নেয়া সম্ভব।