খবর৭১ঃ
এয়ার কন্ডিশনার বা এসি। বর্তমান সময়ের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গৃহস্থালী পণ্য। কিন্তু একটু অসচেতনায় এই আরামদায়ক পণ্যটিই হতে পারে জীবননাশী। এসি বিস্ফোরিত হয়ে প্রায়ই মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়।
সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাড্ডায় এসি বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট আগুনে পুড়ে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর সংবাদ পত্রপত্রিকায় এসেছে। তাই এসি বিস্ফোরণের বিষয়ে সবারই সচেতন হওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক অলোক কুমার মজুমদার বলছেন, এসি দুর্ঘটনার পেছনে তিন চারটি কারণ রয়েছে।
‘অনেকে রুমের লোড অনুপাতে এসি ব্যবহার করেন না। ফলে এসিটি অনেকক্ষণ ধরে চলতে হয়, সেই সঙ্গে অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। নিম্নমানের এসি কিনলে সেগুলোর ভেতরে ফ্যান, তারের, বিদ্যুতের ব্যবস্থাগুলো ঠিক থাকে না। ফলে সেখানেও কারিগরি ত্রুটি দেখা যায়, যা অনেক সময় আগুনের সূত্রপাত করতে পারে।’ তিনি বলছেন, ‘এসি দুর্ঘটনার আরেকটি বড়ো কারণ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। ফলে কারিগরি ত্রুটির কারণে এসিতে আগুন ধরে যেতে পারে বা এসির গ্যাসে আগুন লেগে সেটি ঘরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’
অনেক সময় উইন্ডো এসির সামনে জানালা বা দরজার পর্দা চলে এলে বাতাস চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়। সেটিও এসিকে গরম করে তুলতে পারে বলে তিনি জানান।
এসি বিস্ফোরণের কারণ এবং তা থেকে রক্ষা পাওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন ওয়ালটন এসি গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সন্দীপ বিশ্বাস। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
যেসব কারণে এসি বিস্ফোরণ হতে পারে:
১. সঠিক স্পেকের পাওয়ার ক্যাবল ব্যবহার না করলে।
২. এসির কনডেনসার এ ময়লা থাকলে কম্প্র্রেসর-এ হাই টেম্পারেচার এবং হাই প্রেশার তৈরি হয়ে।
৩. এসির ভেতরের পাইপের কোথাও ব্লকেজ হলে হাই প্রেশার তৈরি হয়ে কম্প্র্রেসর ব্লাস্ট হতে পারে।
৪. কম্প্র্রেসর-এর লিমিটের চেয়ে বেশি রেফ্রিজারেন্ট (refrigerant) চার্জ করলে এবং সঠিক পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেন্ট চার্জ না করলে হাই প্রেশার তৈরি হয়ে।
৫. কম্প্রেসর-এ প্রয়োজনীয় পরিমাণ রেফ্রিজারেন্ট না থাকলে ভেতরের তাপমাত্রা লিমিটের চেয়ে বেড়ে গিয়ে।
৬. সঠিকভাবে এসির ভ্যাকুয়াম না করলে।
৭. সঠিক রেটিং এর সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার না করলে।
এসি বিস্ফোরণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় :
১. ভালো মানের এবং সঠিক স্পেকের পাওয়ার ক্যাবল ব্যবহার করা।
২. এসির কনডেনসার নিয়মিত পরিষ্কার রাখা।
৩. কম্প্র্রেসর-এ হাই টেম্পারেচার এবং হাই প্রেশার তৈরি হচ্ছে কি না পরীক্ষা করা।
৪. এসির ভেতরের পাইপের কোথাও ব্লকেজ আছে কি না পরীক্ষা করা।
৫. কম্প্র্রেসর-এ প্রয়োজনীয় পরিমাণ রেফ্রিজারেন্ট আছে কি না তা অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দ্বারা পরীক্ষা করা।
৬. কম্প্র্রেসর-এর লিমিটের চেয়ে বেশি রেফ্রিজারেন্ট চার্জ না করা এবং সঠিক পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেন্ট চার্জ করা।
৭. সঠিকভাবে এসির ভ্যাকুয়াম করা।
৮. বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের এসি, কম্প্র্রেসর এবং রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করা।
৯. নিম্নমানের অখ্যাত কিংবা নকল ব্র্যান্ডের এসি এবং কম্প্র্রেসর কেনা এবং ব্যবহার থেকে বিরত থাকা।
১০. সঠিক রেটিংয়ের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা।
১১. বারান্দা কিংবা খুব কাছে না রেখে ঘরের বাইরে এসি আউটডোর সেট করা।
১২. দীর্ঘদিন পর এসি চালু করার আগে একজন দক্ষ সার্ভিস এক্সপার্ট দিয়ে এসিটি পরীক্ষা করে নেওয়া।