খবর৭১ঃ বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেছেন আদালত। বুধবার দুপুর ২টার দিকে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে এ মামলার প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৮ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তারা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯), মো. মুসা (২২), আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল ইসলাম সাইমুন (২১)।
এদের মধ্যে এক থেকে সাত নম্বর অভিযুক্ত ৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ৩০২ এবং ৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ৮ এবং ১০ নম্বর ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে ২১২ এবং ১২০ বি ১ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়ছে। এছাড়া এ মামলার প্রাপ্ত বয়স ৯ নম্বর আসামির বিরুদ্ধে আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ গঠন করা আসামিরা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। তাদেরকে আজ অভিযোগ গঠন উপলক্ষে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
এছাড়া বাবার সঙ্গে আদালতে হাজির হন জামিনে থাকা নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। পরে আসামিদের উপস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়। অভিযোগ গঠন শেষে কারাগারে থাকা আট আসামিকে আবারও কারাগারে পাঠানো হয়।
এছাড়া সাইমুন নামে এক আসামির জামিনের আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবী। কিন্তু তা নামঞ্জুর করেন আদালত। অন্যদিকে প্রত্যেক আসামির আইনজীবী মামলা থেকে তাদের মক্কেলকে অব্যাহতির আবেদন করেন। আদালত তাও নামঞ্জুর করেন।
রিফাত হত্যা মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ মামলার ৩৭ আসামির সাক্ষ্যগ্রহণ করবেন আদালত।
এর আগে গত ২৮ নভেম্বর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ পিছিয়ে ১ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছিলেন আদালত।
ওইদিন আদালত প্রাঙ্গণে রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, একমাত্র ছেলে খুন হওয়ার পর কোনো কিছু ভালো লাগে না। সারাদিন রিফাতের মা কান্নাকাটি করে। সকালে রিফাতের মা আমাকে বলে, বেশি দিন বাঁচব না। ছেলের বিচার দেখে মরতে চাই।
গত বছরের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে প্রথমে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সন্ত্রাসীরা। এরপর তাক বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে নেয়ার পর সেখানেই মারা যান।
এ ঘটনায় ২৭ জুন রিফাতের বাবা বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। গ্রেফতার ১৫ আসামির সবাই এ হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা ১ সেপ্টেম্বর দুই খণ্ডে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। শিশু আদালতে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিচারের জন্য এবং প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিচারের জন্য দায়রা জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের অভিযোগ গঠনের তারিখ আগামী ৮ জানুয়ারি নির্ধারিত রয়েছে।