খবর৭১ঃ গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে তাবলিগ জামায়াতের সবচেয়ে বড় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমাকে সফল করতে নানা প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। ইজতেমা ময়দানের বিশাল সামিয়ানা টাঙ্গানো, রাস্তাঘাট মেরামত ও পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ চলছে জোরেশোরে। আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও নাশকতারোধে থাকছে কঠোর নিরাপত্তা-ব্যবস্থা। এরই মধ্যে মাঠের অকেটা কাজ শেষ হয়েছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
ইজতেমা ময়দানে দুইপক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় এবার জেলা প্রশাসনের জিম্মায় আলাদাভাবে জোবায়েরপন্থি ও সাদপন্থিদের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় র্যাব, বিজিবিসহ বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কাজ করবে। সিসিটিভি ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে ইজতেমা এলাকা।
সরেজমিনে শনিবার দেখা গেছে, তুরাগ তীরের প্রায় ১৬০ একর জমি বিস্তৃত ইজতেমা ময়দানে প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুসল্লিদের অংশগ্রহণে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে চলছে ময়দানের প্রস্তুতির কাজ। ময়দানে বিশাল চটের সামিয়ানা টাঙ্গানো হয়েছে। কেউ বাঁশ পুতছেন, তেউ সুতলি দিয়ে বাঁশ বাঁধছেন। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বৈদ্যুতিক তার টানানো হয়েছে, দেয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি। মাঠ সমতল করা, রাস্তাঘাট মেরামত, সংস্কার এবং নতুন নতুন রাস্তা তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। ইজতেমার জিম্মাদারদের অধীনে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে মুসল্লিরা এসব কাজ করছেন।
ইতোমধ্যে স্বেচ্ছাশ্রমেই ময়দানের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ করেছে মুসল্লিরা। মুসল্লিরা বলছেন, কোন অর্থের লোভে নয়; বিশে^র লাখ লাখ মেহমান আসবে তাদের থাকা খাওয়া ও বসার জন্য এবং একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
রাজধানীর হাতিরপুল এলাকা থেকে আসা কাইয়ুম জানান, আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষে তারা ইজতেমা ময়দানে স্বেচ্ছায় কাজ করতে এসেছেন। এখানে কোনো টাকা পয়সার বিনিময় নেই। দেশ বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লিদের বয়ান শোনা ও ইবাদত বন্দেগি করার জন্য ইজতেমা ময়দানে কাজ করছেন তিনি।
সাভার থেকে আসা মুসল্লি সিরাজ বলেন, ইজতেমা ময়দানে পরিবেশ ভাল রয়েছে। তবে দুই পক্ষের মারামারির অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এবার আর হবে না আশা করছি। দ্বীন কায়েমের জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দ্বীনের মেহনত করা প্রয়োজন।
এবার ইজতেমায় মুসল্লিদের আগমনের মাইলফলক হবে আশা করে ইজতেমার এক মুরুব্বি বলেন, এবারের ইজতেমা সুষ্ঠু ও সফল করার জন্য আলেম-ওলামাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মেহনত করছেন। এজন্য মাঠে গতবারের চেয়ে বেশি মানুষের সমাগম হবে। ময়দানের সার্বিক প্রস্তুতিতে প্রশাসন ও সরকার তাদের পাশে রয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্বে মাওলানা জোবায়েরপন্থির অনুসারিদের জন্য ১০ জানুয়ারি ইজতেমা শুরু হবে। ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে প্রথম পর্ব। এরপর ইজতেমা ময়দান জেলা প্রশাসনের জিম্মায় রেখে জোবায়েরপন্থি মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দান ত্যাগ করবেন। পরে ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে হবে সাদপন্থিদের ইজতেমা। ১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এই পর্ব।
অন্যান্য বছরের চেয়ে আরও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ইজতেমা সম্পন্নের জন্য ইতোমধ্যে ময়দানের আশপাশে সিসিটিভি বসানোসহ ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হচ্ছে। যাতে পুরো ইজতেমা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে থাকে। ময়দানে ৪৫০টি সিসিটিভি স্থাপন করার জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ চলছে। ময়দানের ভেতর ও বাইরে সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করবে। এছাড়া র্যাবের মোবাইল টহল, গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকবে।
শনিবার ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন করেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার জয়নুল বারী। আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি। জয়নুল বারী বলেন, মাঠে সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। আগামী ৫ জানুয়ারির ভেতর সকল কাজ সম্পন্ন হবে বলে আমি আশা করছি। ইজতেমার মুসল্লিদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেই দিক লক্ষ্য রেখে কাজ চলছে। তাদের কোনো ধরনের সমস্যা বা দুর্ভোগ হবে না।
ইজতেমায় সকল সেবা নিশ্চিতের জন্য যা যা করা দরকার তার জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশন প্রস্তুত জানিয়ে মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইতোমধ্যে মাটি ভরাট করে ইজতেমা ময়দানকে সমতল করা হয়েছে। ধূলোবালি নিয়ন্ত্রণ ও মশা নিধনে কাজ শুরু করা হচ্ছে। মহাসড়কে ধূলোবালি যাতে না ওঠে সেজন্য প্রয়োজনে বিআরটি প্রকল্পের কাজ যেন বন্ধ রাখা হয় সেজন্য ঠিকাদারকে বলা হবে।
পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত ও ভেজালবিরোধী অভিযানসহ যেকোনো অপরাধের তাৎক্ষণিক সাজা দেয়ার জন্য ইজতেমা এলাকায় মোবাইল কোর্ট নিয়োজিত থাকবে।
নিরাপদ পরিবেশে ইজতেমা আয়োজনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এবারের আয়োজনে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অন্যবারের চেয়ে বেশি সংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছাড়াও নানা নিরাপত্তা সরঞ্জাম রাখা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, বিজিবি আমাদের পাশে থাকবে। ইতোমধ্যে ময়দানে তারা কাজ শুরু করেছেন, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করছেন। জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্যবিভাগ, সিটি করপোরেশন, পুলিশের আলাদা আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে। সেখানে সব পর্যায়ের লোকজন সার্বক্ষণিক অবস্থান করবেন। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া এবার ইজতেমা সফলভাবে সম্পন্ন হবে বলে আমি আশা করি।’