মিজানুর রহমান মিলন,;সৈয়দপুর :
সৈয়দপুরে ভারত থেকে আমদানিকৃত প্যাকেটজাত করা ২০ কার্টুনে ২০০ কেজি মহিষের কলিজা মালিকবিহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ওইসব কলিজা উদ্ধার করা হয়। এ সময় সেখান থেকে দুইজনকে আটক করা হলেও এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা না থাকায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর আমদানির স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না মেলায় উদ্ধার করা ওইসব মহিষের কলিজা মাটি চাপা দিয়ে ধ্বংস করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈয়দপুরের একটি সিন্ডিকেট বেশ কিছুদিন ধরে পার্শ্ববর্তি ভারত থেকে আমদানিকরা গরু ও মহিষের মাংস ও কলিজা গোপনে এনে শহরের বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁসহ গ্রামের হাটবাজারে সরবরাহ করে আসছিল। আর ওই্ সিন্ডিকেটের কাছ থেকে সেসব কলিজা ১৮০-২০০ টাকা কেজি দরে সস্তায় কিনে গোশত ব্যবসায়ীসহ হোটেল রেস্তোরাঁর মালিকরা সাধারণ গ্রাহকদের মাঝে পরিবেশন করছিল। বেশ কিছুদিন ধরে সিন্ডিকেটের চলে আসা এ কারবারটি সম্প্রতি সৈয়দপুর পৌর ও উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও সৈয়দপুর মাংস ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দের নজরে আসে।
এ অবস্থায় দূর্গন্ধযুক্ত, মানহীন ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব ভারতীয় প্যাকেটজাত গরু,মহিষের মাংস, কলিজা বিত্রিু বন্ধ করতে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। এ বিষয়ে সৈয়দপুর পৌরসভা মাংস ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে গত ১০ ডিসেম্বর সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করা হয়। এ আবেদনের পরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাসিম আহমেদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সৈয়দপুর পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও মাংস ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ গোপন সংবাদে জানতে পারেন প্রায় দুই মাস আগে আমদানিকরা ভারতীয় মহিষের কলিজার একটি বড় চালান ঢাকা থেকে একটি নৈশকোচে সৈয়দপুরে আসছে। এ খবর পেয়ে সৈয়দপুর পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. আলতাফ হোসেন সরকার এবং পৌর মাংস ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. নাদিম কোরাইশী ওরফে ছোকটা তাঁর সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে ভোর থেকেই সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থান নেন। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মিথিলা এক্সপ্রেস নামের একটি নৈশকোচের লকার থেকে বেশ কয়েকটি প্লাষ্টিকের বস্তা নামাতে দেখে তাদের সন্দেহ হয় তাদের। পরে সৈয়দপুর পৌর স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. আলতাফ হোসেন সরকারের নেতৃত্বে ওই সব বস্তা খুলে দেখা যায় তাঁর মধ্যে কাগুজের কার্টনের মধ্যে কলিজা রয়েছে। আর এ কার্টুনের প্যাকেটে হালাল হিমায়িত হাঁড় ছাড়া মহিষের মাংস এবং উৎপাদক ও রপ্তানিকারক হিসেবে নাম লেখা রয়েছে অলানা সন্স প্রাইভেট লিঃ, অলানা হাউজ,অলানা রোড, কোলাবা, মুম্বাই, ভারত। আর কার্টনের গায়ে বাংলাদেশী আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী হিসেবে এস আর পি ট্রেডিং,পুরানা পল্টন, ঢাকা এবং ব্যবহারিকারি দেশের নাম হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। ২০ কার্টুনে ১০ কেজি করে ওজনের উদ্ধারকৃত এ সব কলিজার পরিমাণ ২০০ কেজি। কলিজার সাথে আমদানির অসম্পূর্ণ কিছু কাগজ থাকলেও কার নামে এসব সৈয়দপুরে এসেছে তা না পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পরিমল কুমার সরকার থানা পুলিশকে সাথে নিয়ে বাস টার্মিনালে যান। সেখানে মালিকবিহীন এ সব কলিজা জব্দ করেন। সেগুলো নিয়ে আসা হয় উপজেলা পরিষদ চত্বরে। পরে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতিতে গর্ত করে মাটি চাপা দিয়ে ধ্বংস করা হয়।
এ সময় সৈয়দপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পরিমল কুমার সরকার, উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুল হক, উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. অহিদুল হক, পৌরসভা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. আলতাফ হোসেন সরকারসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। এব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাসিম আহমেদ বলেন, এসব কলিজার ব্যাপারে আমি আগেই মাংস ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। আর সব কলিজা না আনার জন্য এখানকার ব্যবসায়ী বলেছি। কারণ এসব ভারত থেকে আমদানিকৃত হলে যথাযথভাবে সংরক্ষনের ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া এ সব মাংস কিংবা কলিজার আমদানি বিষয়ে আমি এখন পর্যন্ত সরকারি কোন নির্দেশ পাইনি। তাই জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব কলিজা ধ্বংস করা হয়েছে এবং ওইসব কলিজা যাতে ক্রয় বিক্রয় না করা হয় সেজন্য মনিটরিং করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।