ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়েছে শীতের প্রকোপ, নেই পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র উত্তর জনপদের হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত ঠাকুরগাঁও জেলা। অন্যান্য জেলার আগেই শীতের আগমন হয় এ জেলায়। আর শীত আসলেই অসহায় হয়ে পড়ে জেলার দুস্থ শীতার্থরা। ঠাকুরগাঁওয়ে ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। ৮০ ভাগ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতল সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রতিবছর শীত জনিত রোগে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। আর শীত আসলেই শিশুসহ নানা বয়সের মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতলে ভর্তি হয়। ঠাকুরগাঁও সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এখানে শীতের তীব্রতা অনেক বেশি।
গ্রামাঞ্চলের মানুষ খড়খুটো দিয়ে বেশির ভাগ সময় শীত নিবারণের চেষ্টা করে। বেশির ভাগ হত দরিদ্র মানুষ শীতের জন্য গরম কাপড় কিনতে পারে না। তাই অনেকে শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সরকারি ভাবে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক যে পরিমাণ শীতবস্ত্র বিতরণ করে তা অপ্রতুল্য।
এছাড়াও ঠাকুরগাঁও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে শীত বস্ত্র না পাওয়ার অভিযোগ সীমান্তবর্তী এলাকার দরিদ্রদের। তারা জানান, জেলা শহর হতে আমাদের এখানের দূরত্ব বেশি হওয়ায় শীত বস্ত্র আমাদের এখানে আসার আগেই শেষ হয়ে যায়। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালিয়া গ্রামের আমজাদ হক নামে ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হামার গ্রামত অনেক শীত বাহে। সূর্য পরিলেই শীত আরও বেশি লাগেছে। কম্বলত শীত মানিবার চায় না। কিন্তু হামার কপালত কনোদিন একটাও শীতের কাপড় জুটেনি। হত-দরিদ্র মোমেনা খাতুন জানান, ভিক্ষা করে জীবন চলে। শীত আসিলেই ভিক্ষা করবা পারি না ঠাণ্ডার কারণে। সরকার গরিবক শীতের কাপড় দেয় না। ওইলাতো পায় বড়লোক মানুষ। ঠাকুরগাঁও শহরে ভিক্ষা করার সময় ভিক্ষুক রাবেয়া বলেন, শীতকালে সরকারি যে কম্বল পাই তা দিয়ে শীত যায় না। এত পাতলা কম্বল দিয়ে কি করব আমরা। মোটা কম্বল হলে একটাই কম্বল পাইলে আমরা খুশি। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ৬০ হাজারের বেশি শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়। গত বছর প্রধানমন্ত্রী দপ্তর থেকে প্রায় ২০ হাজার শীতবস্ত্র পাওয়া গেছে। এছাড়াও অনেক বেসরকারি এনজিও সংস্থা থেকে প্রায় ৫-১০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।
জেলায় অনেক মানুষ হত-দরিদ্র। যে পরিমাণ চাহিদা পাঠানো হয় তার অর্ধেক শীতবস্ত্র পাওয়া যায়। গত বছরের চেয়ে এ বছর আরও বেশি শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হবে।ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল বলেন, হিমালয়ের পাদদেশে ঠাকুরগাঁও জেলা অবস্থিত হওয়ার কারণে জেলায় শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। তাই শিশু ও বিভিন্ন বয়সের মানুষ তাড়াতাড়ি শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষার জন্য গরম কাপড় পরিধান করতে হবে। শিশুদেরকে ঠাণ্ডা না লাগানোর জন্য মায়েদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম জানান, হেমন্তের শুরুতেই জেলায় শীতের আগমন ঘটেছে। জেলায় শীতবস্ত্রের চাহিদা অনেক বেশি। কিন্তু সরকারি ভাবে আমরা তা দিতে পারি না। যতটুকু পাওয়া যায় তা গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। তাই বেসরকারি সংস্থা গুলো যদি প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আরও এগিয়ে আসে তাহলে অনেকটা শীতবস্ত্রের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।