খবর৭১ঃ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী ৩০ জানুয়ারি করার চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। আর তফসিল ঘোষণা হতে পারে আগামী রোববার। ওইদিন অনুষ্ঠেয় কমিশন সভার নির্ধারিত আলোচ্যসূচিতে (এজেন্ডা) দুটি সিটির নির্বাচনের তফসিলের বিষয়টি রাখা হয়েছে।
ইসির রোববারের বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে কোনো এজেন্ডা নেই। যদিও ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল একইদিন ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রাম সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আরও জানা গেছে, বিদ্যমান ভোটার তালিকা অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দুই সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে।
ভোটের সময়সূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, আগামী রোববার কমিশন সভার এজেন্ডায় ঢাকার দুই সিটির তফসিল ঘোষণার বিষয়টি রয়েছে। ওইদিনই তফসিল ঘোষণা করা হবে। ভোটগ্রহণের দিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিশন সভায় ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। এ বিষয়ে আগাম কিছু বলা যাচ্ছে না।
কমিশন সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কমিশনের ৫৩তম সভায় জানুয়ারির মধ্যে ঢাকার দুই সিটিতে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ হিসাবে ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ভোটের তারিখ নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।
তারা জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ বা ৩১ ডিসেম্বর ও প্রত্যাহারের তারিখ ১০ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হতে পারে। কমিশন বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
৩০ জানুয়ারি ভোটের তারিখ নির্ধারণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ওই কর্মকর্তারা বলেন, ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ও ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। এসব কারণে ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ নির্ধারণ সম্ভব নয়।
এছাড়া তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটের সময় পর্যন্ত সাধারণত ৩৬-৪৫ দিন সময় ব্যবধান রাখা হয়। আগামী ২২ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হলে ৪০তম দিনে ভোটগ্রহণ করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একজন যুগ্মসচিব বলেন, ঢাকায় বিপুলসংখ্যক ভাসমান ভোটার রয়েছে। ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ করা হলে শুক্র ও শনিবার মিলিয়ে তিন দিন ছুটি পাবেন নগরবাসী। এতে অন্তত ৭-১০ শতাংশ ভোটার ছুটিতে বাড়িতে চলে যেতে পারেন। এমন শঙ্কায় ২৯ জানুয়ারি ভোট করার পক্ষেও যুক্তি তোলা হবে কমিশন সভায়। পুরো বিষয়টি কমিশন সভার ওপর ছেড়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, এই দুই সিটির পুরো নির্বাচন হবে ইভিএমে। এ মেশিনে প্রার্থী ও ভোটার তথ্য সন্নিবেশ করার কাজ বেশ সময়সাপেক্ষ। আর ইভিএম পরিচালনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তা নেয়া হবে। সেনাবাহিনীর শীতকালীন মহড়া শেষ হবে জানুয়ারির শেষ নাগাদ। ওই সময় হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করা হবে। ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে।
জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজও শেষ করে আনছে কমিশন সচিবালয় ও ঢাকা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। তৈরি করা হয়েছে খসড়া ভোটকেন্দ্র ও কক্ষের খসড়া তালিকায়। খসড়ায় ঢাকা উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩১৮টি কেন্দ্র ও ৭ হাজার ৮৪৪টি ভোটকক্ষ রয়েছে।
এ সিটিতে সম্ভাব্য ভোটার রয়েছেন ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন; এর মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩০ জন ও মহিলা ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৯১ জন। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের খসড়া তালিকায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ১৫০টি ও ভোটকক্ষ ৬ হাজার ৬২২টি।
দক্ষিণ সিটির সম্ভাব্য ভোটার সংখ্যা ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৬ জন; এর মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭ জন ও মহিলা ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৪৯ জন। কমিশন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিদ্যমান ভোটার তালিকায় এ দুই সিটিতে ভোট হবে। এর ফলে ভোটার তালিকায় হালনাগাদে অন্তর্ভুক্ত নতুন ভোটাররা এ নির্বাচনে প্রার্থী বা ভোটার হতে পারবেন না।
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন নিয়ে আইনগত কোনো জটিলতা নেই বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়। কর্মকর্তারা জানান, ইসি সচিবালয় থেকে আইনগত মতামত জানতে চেয়ে চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলেছে, ঢাকার দুই ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত আইনগত জটিলতা নেই এবং আইন অনুযায়ী নির্বাচন করতে বাধা নেই।