রোববার সারা দেশে বিএনপির বিক্ষোভ

0
635
রোববার সারা দেশে বিএনপির বিক্ষোভ

খবর৭১ঃ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজের প্রতিবাদ ও তার মুক্তির দাবিতে রোববার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

এদিন ঢাকা মহানগরে থানায় থানায় সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক শেষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। বলেন, এই হচ্ছে আপাতত কর্মসূচি।

পরের কর্মসূচি পরে ঘোষণা করব। তিনি বলেন, যে রায় হয়েছে তাতে আমরা হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। পুরো জাতি স্তম্ভিতই নয়, ক্ষুব্ধও। সবার প্রত্যাশা ছিল সর্বোচ্চ আদালত থেকে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সরকারের মদদেই এমন রায় হয়েছে বলে আমরা মনে করি। বিচার ব্যবস্থাকে এ সরকার দুর্বল করে ফেলেছে। জনগণের সক্রিয় আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নতুন নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে, জামিন আবেদন আদালতে খারিজ হওয়ার প্রতিবাদে রাজধানীতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন। বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের আদেশের পরপরই বিচ্ছিন্নভাবে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ দেখায় দলের নেতাকর্মীরা।

মিছিল থেকে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। তাৎক্ষণিক ঝটিকা মিছিলে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি তেমন ছিল না। সভা-সমাবেশ আর সংবাদ সম্মেলন করে এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও বিএনপির সিনিয়র কোনো নেতাকে এসব মিছিলে দেখা যায়নি।

দেখা মেলেনি মহানগরের শীর্ষ নেতাদেরও। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। চেয়ারপারসনের জামিন-পরবর্তী পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না বলে মনে করেন তারা।

তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়াও জানানো হয়নি। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল।

এদিকে করণীয় চূড়ান্তে সন্ধ্যায় বৈঠকে বসেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন। চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও বেগম সেলিমা রহমান, অ্যাডাভোকেট জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারপারসনের জামিনের আদেশ খারিজ হওয়ার পর কর্মসূচি কি হতে পারে সে ব্যাপারে নেতারা মতামত দেন। কয়েকজন রাজপথে কঠোর আন্দোলনের পক্ষে মত দেন। এ ইস্যুতে রাজপথে না নামলে নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে বলে তারা যুক্তি দেখান।

তবে কেউ কেউ এই মুহূর্তে এক দফার আন্দোলনে যাওয়া ঠিক হবে কি না, সে ব্যাপারে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষে মত দেন। নেতাদের মতামতের পর দলের হাইকমান্ডও কঠোর আন্দোলনের পক্ষে নমনীয় মনোভাব দেখান।

এদিকে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির সর্বশেষ আইনি প্রক্রিয়া নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। জয়নুল আবেদীন এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ আশপাশে ব্যাপকসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সকাল থেকে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার লোকদেরও তৎপর দেখা যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে পারেনি। কার্যালয়ে যাননি সিনিয়র নেতারা। সকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কার্যালয়ে আসেন।

আদেশের আগেই তিনি চলে যান। মহিলা দলের কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত হয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে স্লোগান দেন। বিকাল তিনটায় সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়া জানানোর কথা বলা হলেও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখায়নি বিএনপি।

খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ খারিজ করে দেয়ার পর দুপুর দেড়টায় রাজধানীর বাংলামোটরে বিক্ষোভ করেন দলের নেতাকর্মীরা। মিছিলে নেতৃত্ব দেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, মহানগর পশ্চিম ও মোহাম্মদপুর থানা বিএনপি এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

পরে রিজভী আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার পরও নির্যাতনের মাত্রা আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার তাকে তার ন্যায়সঙ্গত অধিকার জামিন থেকেই শুধু বঞ্চিত করছে না, বরং শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ একজন বয়স্ক নারীকে সুচিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত করছে।

জনগণের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল আদালত তার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। আমরা মনে করি, সরকারের হস্তক্ষেপেই আদালত তা খারিজ করলেন। প্রকৃত অর্থে এ আদেশের মাধ্যমে একটি খারাপ নজির স্থাপিত হল।

তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের এখন আর ঘরে বসে থাকলে চলবে না। গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে সব বাধা উপেক্ষা করে রাস্তায় নামতে হবে। এদিকে রায়ের পর হাইকোর্টের মাজার গেটের উল্টো পাশের ফুটপাতে কয়েক নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন।

তখন পুলিশ তাদের ধাওয়া করে এবং সেখান থেকে পল্টন থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ পাটোয়ারী ও পল্টন থানা ছাত্রদলের সাবেক নেতা ইব্রাহিম খলিলকে আটক করে পুলিশ।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ দেখায় জাতীয়তাবাদী যুবদল। মিছিলে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন টুকু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতাকর্মীরাও বিক্ষোভ করেছে। উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক মিল্টনসহ নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন।

খালেদা জিয়ার জামিন খারিজের প্রতিবাদ ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিউল বারী বাবু এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল মৌচাক মোড় থেকে শুরু হয়ে সফিনা হাসপাতাল হয়ে মালিবাগ রেলগেট গিয়ে শেষ হয়।

মিছিলে ছিলেন গোলাম সরোয়ার, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামান, এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, গাজী রেজওয়ান হোসেন রিয়াজ, আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, মুশফিকুর রহমান লেলিন, আবদুল্লাহ আল মামুনসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাকর্মীরা।

এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দল-ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতা জামাল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে দলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে।

ঢাবিতে বিক্ষোভ : এদিকে ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদল। দুপুরে ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের নেতৃত্বে মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ঢাবির বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।

এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, আল মেহেদী তালুকদার, জাকিরুল ইসলাম জাকির, হাফিজুর রহমান, পার্থদেব মণ্ডল, আমিনুর রহমান আমিন, আবু তাহের, তানজিল হাসান, খায়রুল আলম সুজন, আমানউল্লাহ আমান, নাছির, রাজু আহমদসহ ঢাবির বিভিন্ন হল ও ইউনিটের নেতাকর্মীরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here