খালেদা জিয়ার রিপোর্ট আদালতে, জামিন শুনানি আজ

0
670
খালেদা জিয়া

খবর৭১ঃ দুর্নীতি মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়া স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদন বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) থেকে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন আবেদনের বিষয়ে আজ আদালতের আদেশ হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আজকের কার্যতালিকার ১২ নম্বর ক্রমিকে আছে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনটি। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে আপিল আবেদনটির ওপর শুনানি হবে।

এদিকে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি ঘিরে রাজধানীতে বাড়তি সতর্কতা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বুধবার বিকালে হাইকোর্টের সামনে তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।

বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিএসএমএমইউ উপাচার্যের প্রতিনিধিদের সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে ঢুকতে দেখা যায়। তাদের একজনের হাতে ছিল বিএসএমএমইউর লোগো সংবলিত খাকি রঙের ফাইল। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কেউ কিছু বলতে রাজি হননি।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আলী আকবরের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলব না। আপনারা সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। যা বলার সেই বলবে।’

সাংবাদিকরা মুখপাত্র সাইফুর রহমানের কক্ষে গেলেও সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি একটা মিটিংয়ে আছি, এ বিষয়ে কিছু জানি না।’

জিয়া এতিমখানা ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিভিন্ন মামলায় জামিন হওয়ার পর জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটিতে জামিন হলেই খালেদার মুক্তির পথ খুলবে বলে আশা করছেন তার আইনজীবীরা।

গত ৫ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চে এই আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা প্রতিবেদন দিতে না পারায় এজলাসে তুমুল হট্টগোলের মধ্যে তাদের আরও ছয় দিন সময় দিয়ে ১২ ডিসেম্বর আদেশ দেয়ার দিন ঠিক করে আদালত।

বিকালে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, আমরা প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিয়েছি। খালেদার চিকিৎসায় গঠিত অধ্যাপক জিলন মিঞা সরকারের নেতৃত্বে সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ড এই প্রতিবেদন দিয়েছে বলে জানান উপাচার্য।

এদিকে চিকিৎসকদের দেয়া প্রতিবেদনই বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ আদালতে পাঠিয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ থেকে প্রতিবেদনের ফাইল সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার আগে গুলশানের লেইক শোর হোটেলে এক গোলটেবিল বৈঠকে নিজের সন্দেহের কথা জানান ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, মেডিকেল বোর্ড যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, সেই রিপোর্টটিকে সরিয়ে অন্য কোনো রিপোর্ট দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

খালেদার স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে চিকিৎসকদের একটি প্রতিবেদন গোলটেবিলে পড়ে শোনান ফখরুল। তিনি বলেন, গত ৩০ নভেম্বর এই প্রতিবেদনটি দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। এখানে খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘ক্রিপল স্টেইজ’ উল্লেখ করে তার উন্নত চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে। এই রিপোর্টটি সুপ্রিম কোর্ট চেয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা উপস্থিত করা হয়নি।

খালেদার জামিন আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে গত ২৮ নভেম্বর তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানতে মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। কিন্তু ৫ ডিসেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার কিছু পরীক্ষা হয়েছে, কিছু পরীক্ষা বাকি আছে। সেজন্য সময় প্রয়োজন বলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এরপর ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে ‘কোনোরকম ব্যর্থতা ছাড়াই’ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন দিতে বিএসএমএমইউ উপাচার্যকে নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন। আরেকটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ওই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here