খবর৭১ঃ রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মৃত্যু নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। তাকে ভবন থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে কি-না, আর সেটা হলে কোন ভবন থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে এবং মৃত্যুর আগে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন কি-না, এসব বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত সংস্থা।
তারা বলছেন, রুম্পাকে ভবন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। যদিও এই ঘটনায় কে বা কারা জড়িত সে ব্যাপারে পরিবার ও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত হতে পারেনি। এ ঘটনায় নিহত রুম্পার চাচা নজরুল ইসলাম বলেন, হত্যার পর রুম্পাকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়, এটা নিশ্চিত। তদন্ত চলছে, দেখা যাক কী হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাতিজির সঙ্গে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি ছেলের সঙ্গে সর্ম্পক ছিল। তাদের ভেতরে ঝামেলা চলছিল বলে আমরা শুনেছি। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওই ছেলের কোনো সর্ম্পক আছে কি না, তা আমরা জানিনা। এ ব্যাপারে আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। কর্তৃপক্ষ ওই ছেলেকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’
এ দিকে রুম্পা হত্যার বিচার দাবিতে সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে যান। সেখানে তারা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এএনএম আরিফুর রহমান, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ নাহিদ নেওয়াজসহ শিক্ষকবৃন্দ অংশ নেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা রুম্পা হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত বিচার দাবি করেন।
পুলিশের রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার শেখ মোহাম্মদ শামীম বলেন, রুম্পাকে সিদ্ধেশরীর সার্কুলার রোডের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পেছনের একটি বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হতে পারে। এ ঘটনায় রমনা থানার এসআই আবুল খায়ের বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আমরাও ধারণা করছি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় কে বা কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
নিহত রুম্পা স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের (৬৯ ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তার মা ও ভাইয়ের সঙ্গে শান্তিবাগের ২৫৫ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তার বাবা রোকন উদ্দিন পুলিশ বিভাগে পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। তিনি বর্তমানে হবিগঞ্জে কর্মরত।
নিহত রুম্পার চাচা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তার ভাতিজি পাশের একটি বাড়িতে টিউশনি করতে গিয়েছিল। সেখান থেকে সন্ধ্যার দিকে নিজ বাসার নিচে যান রুম্পা। এরপর রুম্পা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া তার এক চাচাতো ভাইকে ফোন করে বাসার নিচে স্যান্ডেল আনতে বলে। স্যান্ডেল নিয়ে আসলে ওই চাচাতো ভাইয়ের কাছে রুম্পা কানের দুল, মোবাইল, ঘড়ি, হিল জুতা ও টাকাসহ ব্যাগ দিয়ে দেয়। সেগুলো ওপরে নিয়ে যেতে বলে তাকে। একই সঙ্গে মাকে বলতে বলে, তার আসতে দেরি হবে। আমার প্রশ্ন- কেন সে এগুলো রেখে যাবে? আত্মহত্যার পরিকল্পনা করলে তো বাড়ির ছাদ আছে। ওখানে যাবে কেন ? নাকি কোনো ঝামেলা ছিল, তাই এগুলো রেখে গিয়েছিল ? এসব ভাল করে তদন্ত করতে হবে।’
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের এক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে সহপাঠী রিফাতের সঙ্গে রুম্পার ভাল সম্পর্ক ছিল। কয়েকদিন ধরে তাদের মধ্যে টানাপোড়ন চলছিল। তবে সেটি প্রেমের সম্পর্ক কি-না তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ নাহিদ নেওয়াজ বলেন, ‘৬৯ ব্যাচের ওরিয়েন্টশন ক্লাস তিনি নিয়েছিলেন। রুম্পা একজন শান্ত ও লক্ষ্মী মেয়ে ছিল। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রে বার্ড নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ছিল না। ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। ’
রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, সিদ্ধেশ্বরীর ৬৪/৪ নম্বর বাড়ির পাশে আরো দুইটি ভবন রয়েছে। আমরা ধারনা করছি, যে কোনো একটি ভবন থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারিনি। ঘটনাস্থলের পাশে দুইটি ভবন আছে। দশ তলা ভবনটির নিরাপত্তা কর্মী সুমন পুলিশকে জানিয়েছেন, বুধবার রাত ১১ টার দিকে ওই ভবনের সামনে এক নারীকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। বিষয়টি তিনি অন্যদেরকে জানান।
ওসি আরো বলেন, ঘটনার রাতেই হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ পরির্দশক রোকন উদ্দিনকে এ ঘটনা জানানো হয়। পরে তিনি ঢাকায় আসেন। এর আগে তার পরিবার লাশ শনাক্ত করে। তাকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে বা হত্যার আগে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি না- সেটি ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে জানা যাবে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে সিদ্ধেশ্বরীর ৬৪/৪ নম্বর বাসার সামনে রুম্পার রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন ওই ভবনের এক নিরাপত্তা কর্মী। অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করে লাশটি পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়ে দেয়। পরদিন সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে খবর দেখে রুম্পার পরিবারের সদস্যরা রমনা থানায় গিয়ে ছবি দেখে লাশ শনাক্ত করে।